,

রেশম গুটি চাষে বিমালা রানীর ভাগ্য বদল

জেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর: বিমালা রানী। বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বড়হড় গ্ৰামে। স্বামী চিত্ত রঞ্জন বর্মণ ছিলেন কৃষক। বর্মণের মৃত্যুর পর কৃষি কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর পাখা বানানো ও রাস্তায় মাটি কেটেছেন। এখন রেশম গুটি চাষ করছেন। আয় দিয়ে চালাচ্ছেন চার সদস্যের সংসার।

বিমালার (৪০) মতো ওই গ্রামের অর্ধশত নারী রেশম গুটির চাষকে তাদের পেশা হিসেবে নিয়েছেন। তাদের উৎপাদিত রেশম গুটি যাচ্ছে বেনারসি পল্লীতে। গুটি থেকে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য। আজ থেকে ১৭ বছর আগে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বড়হড় গ্রামে খালের দুই পাশে ৫ কিলোমিটার জুড়ে লাগানো হয়েছিল তুত গাছ। এসব গাছের পাতাগুলো রেশম পোকার খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন তারা। ওই গ্রামের নারীরা একসময় শুধু সংসারের কাজ ছাড়া আর কোনো কিছুই করতেন না। কিন্তু রেশম বোর্ডের তত্ত্বাবধানে এখন তারা প্রতিবছর ভালোই করছেন। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে রেশম গুটি চাষীর সংখ্যা।

গ্রামবাসীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই এলাকায় ১৭ বছর আগে প্রথম রেশম গুটি চাষ শুরু করেছিলেন শিল্পী রানী, রিতা রানী ও মোছা. জায়েদা। এরপর তাদের সফলতা দেখে এই কাজে যুক্ত হন শিমলী রানী, রিপা রানী, চিত্রা রানী, সীমা রানী, শিল্পী রানী, পার্বতী রানী, বীনা রানীসহ অর্ধ শতাধিক নারী। তারা প্রথম দিকে বিনামূল্যে রেশম লার্ভা সংগ্রহ করেন প্রকল্প অফিস থেকে। এরপর স্বল্পমূল্যে লার্ভা সংগ্রহ করেন তারা।

বিমালা রানী জানিয়েছেন, বর্তমানে তারা উৎপাদিত রেসম গুটি ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারেন। কিছু দিন আগে তিনি ১৪ কেজি রেশম গুটি বিক্রি করেছেন। এবার অবশ্য দাম কিছুটা কম পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বছরে চারবার রেশম চাষ করা যায়। প্রতিবার আমি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করি। ডিম থেকে গুটি হওয়া ও বিক্রি পর্যন্ত ২৭ দিন সময় লাগে। রেশম পোকার খাবার হিসেবে তুত পাতা প্রায় প্রতিদিনই দিতে হয়।’

তবে তার দাবি, রেসম গুটি প্রতি কেজি ৫০০ টাকা করে বিক্রি করতে পারলে লাভ আরও বেশি হতো। প্রতিবছর ১০০-১৫০টি তুত গাছের চারা তাদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়। খালের পাড়ে তুত গাছ ছাড়াও তারা বাড়ির আশপাশে এগুলো রোপণ করেছেন। একেকটি তুত গাছ ২০ থেকে ২২ বছর পর্যন্ত বাঁচে।

বিমালা বলেন, ‘তুত গাছগুলো অনেকেই নষ্ট করে ফেলে। তাই সরকারি উদ্যোগে এগুলো পাহারার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’

রেশম চাষি রিতা রানী জানান, বহুদিন ধরে তিনি রেশম চাষ করে আয় করছেন। এতে তার পারিবারিক সচ্ছলতা ফিরেছে। এই গ্ৰামের গৃহবধূদের এক সময় কোনো আয় ছিল না। রেশম চাষ শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক গৃহবধূ স্বাবলম্বী হয়েছেন। তারা পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে ভূমিকা রাখছেন। রেশম চাষে অনেক নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে এখন।’

এই বিভাগের আরও খবর