রূপসা প্রতিনিধি, খুলনা: খুলনার রূপসায় ঘেরের পানিতে মাছ আর ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে হাসি ফুঁটেছে কয়েক হাজার চাষির মুখে। এটা দেখা-দেখি অনেকে রাস্তার পাশের পরিত্যাক্ত জায়গায়ও শসার চাষ করে ভাগ্য বদলের চেষ্টা করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ঘেরের পাড়ের চারশ হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে শসার চাষ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ মেট্রিকটন। সে মোতাবেক ভরা মৌসুমে ফলনও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। প্রতি সপ্তাহে এসব এলাকায় আট মেট্রিক টন শসা উৎপাদন হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানাযায়, রূপসায় কয়েক হাজার মৎস্য চাষি ঘেরের ওপরে করছেন শসার চাষাবাদ। ঘেরের পাড়ের শসার আবাদ দেখে উৎসাহিত হয়ে অনেকে রাস্তার পাশের পরিত্যাক্ত জমিতে এর চাষ করছেন। উপজেলার তিলক, সামন্তসেনা, খাঁজাডাঙ্গা, গোয়াড়া, শিয়ালি, ঘাটভোগ, ডোবা, পিঠাভোগ, আনন্দনগর, বাধাল ও ডোমরা গ্রামে শসার চাষ বেশি করা হয়। এসব শসা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ট্রাক যোগে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে পাঠানো হচ্ছে।
তাছাড়া চাষাবাদে যাতে কোনো প্রকার ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ব্লকের সুপারভাইজাররা দেখভাল করে চলেছেন প্রতিনিয়িত। যে কারণে এলাকার অনেক বেকার যুবক ঘেরে পাড়ে শসাসহ সবজি চাষ করে নিজের ভাগ্য ফিরিয়েছেন।
ডোবা গ্রামের অতুল মল্লিক বলেন, এক সময় এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমি ছিলো অনাবাদি। তেমন কোনো ফসল হতো না এসব জমিতে। দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত ছিল প্রতিটি গ্রামের অধিকসংখ্যক মানুষ। এমতাবস্থায় কিছু কিছু জমিতে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যে ঘেরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই অনাবাদি জমি এখন সোনার মাটিতে পরিণত হয়ে উঠেছে। একই জমিতে আমরা মাছ ও সবজি চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছি।
অপরদিকে একই গ্রামের শ্যামল মল্লিক বলেন, ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে আমরা বাড়তি রোজগার করছি। এসব শসা বিক্রি করা নিয়েও আমাদের ভাবতে হয় না। এলাকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নের ফলে গ্রামের মধ্যে চলে আসছে ট্রাকসহ পাইকারি ক্রেতারা। স্থানীয় বাজারের পাইকারি ক্রেতারা শসা নিয়ে যাওয়ার পর যা থাকে তা ওই সব ট্রাক বোঝাই করে চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে। তাই বিগত বছরের চেয়ে আমরা এবার দাম ভালো পাচ্ছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, চিংড়ি ঘেরের পাড়ে শসাসহ সবজি চাষ করে এ এলাকায় কৃষি বিপ্লব ঘটেছে। এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থাও চাঙ্গা হয়েছে। এখানকার মানুষ খুবই পরিশ্রমি ও ধৈর্যশীল। যে কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, সার-বীজ ও পরামর্শ দিয়ে সার্বক্ষণিক সহায়তা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শুধু ঘেরের পাড়ে নয়, প্রতিটি গ্রামের পরিত্যাক্ত জমিতে আগামীতে যাতে আরো কৃষি খামার গড়ে ওঠে সে ব্যাপারে প্রচারণাও চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।