,

যশোরে প্রেমের কারণে কৃষক খুন

যশোর প্রতিনিধি: প্রেমের কারণে যশোর সদর উপজেলার শালতা মাঠপাড়ার কৃষক মিনারুল ইসলামকে খুন হতে হয়েছে। শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে যশোর সদর উপজেলার উসমানপুর থেকে আটক হাফিজুর রহমান পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

এসময় হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। হাফিজুর রহমান ওই গ্রামের চাঁদ আলী মোল্যার ছেলে।

মিনারুল ইসলামকে খুন করার কথা স্বীকার করেছেন হাফিজুর রহমান বলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিস্তারিত জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছেন পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমকে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন।

রবিবার (২৫ আগস্ট) প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে এমকে এইচ জাহাঙ্গীর উল্লেখ করেছেন, হাফিজুর রহমান জাগরণী সমিতির কৃষি বিভাগে কাজ করে। নিহত মিনারুলের ছোট ভাই মান্নান তার বন্ধু। দর্জিদার মান্নানের কাছে দর্জির কাজ শিখতে যেত হাফিজুর। এসময় হাফিজুরের প্রথম স্ত্রী সাবিনার সাথে মিনারুলের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৫ বছর আগে মিনারুলের সাথে সাবিনার অবৈধ মেলামেশা দেখে ফেলে হাফিজুর। এতে মিনারুল তার কাছে ক্ষমা চাইলেও হাফিজুর সাবিনাকে তালাক দিয়ে ডলি নামে এক নারীকে বিয়ে করে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মিনারুল ইসলাম হাফিজুরের স্ত্রীর পর একই গ্রামে বিলকিস নামে এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। এসময় বিলকিস অন্তঃসত্ত্বা হয়। এ ঘটনার জের ধরে মিনারুল ইসলাম জেল খাটলেও হাফিজুরের রাগ কমেনি। তার স্ত্রীর সাথে অবৈধ মেলামেশার প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পনা করে হাফিজুর রহমান।

১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ির সকলে ঘুমিয়ে পড়লে হাফিজুরের বাড়ি থেকে একটি দা নিয়ে খালি গায়ে মিনারুলের বাড়ির ২০০ গজ দুরে জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে লুকিয়ে রেখে আসে। শরীরে যাতে রক্ত না লাগে সেজন্য খালি শরীরে শুধু মাত্র গামছা নিয়ে মিনারুলের বাড়িতে যায় এবং তাকে ডেকে কথা বলে। এ সময় মিনারুলের স্ত্রী সাথী পাশে বসে মোবাইল দেখছিলেন। মিনারুল গরুর জন্য বিছালি কাটছিল। হাফিজুর সেই সময় মিনারুলের সাথে কিছু সময় কথা বলে বাড়ির বাইরে যায়।

এরপর মিনারুলের বিছালি কাটা শেষ হলে তার স্ত্রী সাথী ঘরে উঠে যায়। মিনারুল ২ আটি বিছালি বাড়ির সামনে বিছালির পালায় রাখতে যায়। হাফিজুর পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক এসময় মিনারুলকে বাইরে ডাকে। মিনারুল তার ডাকে বাড়ির বাইরে রাস্তার উপর উঠে আসে। হাফিজুর কৌশলে তাকে ডেকে নিয়ে যায় এবং বলে জঙ্গলে একটি মেগনেট জাতীয় জিনিস খুঁজতে হবে। মিনারুল জঙ্গলে উপুড় হয়ে টর্চ লাইট জালিয়ে মেগনেটটি খুঁজতে থাকে। এসময় হাফিজুর সুযোগ বুঝে পেছন থেকে দা বের করে মিনারুলের ঘাড়ে দা দিয়ে প্রথমে দুটি কোপ দেয়। মিনারুল পেছনে ঘোরার চেষ্টা করলে হাফিজুর তার দা দিয়ে মিনারুলের কপালে দায়ের উল্টা পিঠ দিয়ে আঘাত করে। মিনারুল মাটিতে পড়ে গেলে সে দা হাতে বাড়িতে চলে যায় এবং দা পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে লুকিয়ে রাখে।

মিনারুল বিচালি রাখতে গিয়ে ফিরে না আসায় স্ত্রী সাথীসহ অন্যান্য খুঁজতে থাকে। রাত পৌনে ১২টার দিকে ইসমাইল হোসেনের বাগানের মধ্যে থেকে মিনারুলের ঘাড়ে ও কপালের ডান পাশে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় দেখতে পায় এবং তাকে চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে।

রাত দেড়টার দিকে জরুরী বিভাগের ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আক্তারুজ্জামান অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা করেন।

যশোর কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মনিরুজ্জামান মামলাটি তদন্তের জন্য ফুলবাড়ির পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই শাহ জলিলুর রহমানকে দায়িত্ব দেন। জলিলুর রহমান মিনারুল ইসলাম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে মিনারুলের বন্ধু বাবু ও স্ত্রী সাথী পরে হাফিজুর রহমানকে গ্রেফতার করে।পরে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেয়া হয়।

পিবিআই গত শনিবার হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত হাফিজুর রহমানকে আটক করে এবং হত্যার রহস্য উন্মোচন করে। হাফিজুরের স্বীকারোক্তি মতে মিনারুলকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত দা টি হাফিজুরের বসতঘরের বারান্দার চৌকির কাথার নিচ হতে নিজ হাতে বের করে দেয়।

এই বিভাগের আরও খবর