,

মোরেলগঞ্জে তরমুজের বাজারে ‘আগুন’!

জেলা প্রতিনিধি, বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে তীব্র গরমে একেবারে অতিষ্ঠ মানুষ। এর মাঝে চলছে রোজার মাস। ইফতারিতে এক টুকরো তরমুজ যেন দারুণ তৃপ্তি দেয় রোজাদারদের। নিয়ম ভেঙে কেজি মাপে তরমুজ বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। অথচ যে পদ্ধতিতে ক্রয় সেই নিয়মেই পণ্য বিক্রির বিধান রয়েছে ভোক্তা অধিকার আইনে। কৃষক থেকে পাইকাররা পিস হিসাবে তরমুজ কেনেন।

কিন্তু বেশি লাভের আশায় খুচরা বাজারে অন্যায়ভাবে সেই তরমুজ কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে গেছে মৌসুমি এই ফলটি। ৮-১০ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বর্তমানে বিক্রি করা হচ্ছে ৪ থেকে ৫শ টাকায়। পাইকারি বাজারে এই সাইজের তরমুজের দাম সর্বোচ্চ ২শ থেকে ২১০ টাকা। উৎপাদক পর্যায়ে গেলে তা আরও কম। পুরো বিষয়টিকেই খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজি বলছেন পাইকার আর তরমুজ চাষিরা।

এ বছরই প্রথম এই পদ্ধতিতে তরমুজ বিক্রি চলছে সারা দেশে। কী করে এই সিন্ডিকেট তৈরি হলো তারও কোনো উত্তর মিলছে না। মাঝখান থেকে দেশেই উৎপাদিত এই সুমিষ্ট ফলটির স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

মাত্র সপ্তাহ দশেক আগে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে মধ্যম সাইজের (৪-৫ কেজি ওজন) একটি তরমুজ বিক্রি হত ৮০-১০০ টাকায়, বর্তমানে ওই সাইজের একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়। এমন দামে ক্রেতারা বলছেন, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জেতরমুজ এবার যেন ‘বড় লোকের ফল’।

গতকাল বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জেবিভিন্ন জায়গায় তরমুজ বেচাকেনার এমন চিত্র দেখা গেছে। জানাগেছে, রমযান মাসের আগেও মোরেলগঞ্জে তরমুজের দাম তেমন বেশি ছিল না। ছোট সাইজের একটি তরমুজ ৫০-৮০, মধ্যম সাইজের ৮০-১০০ কিংবা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিলো। আর বড় সাইজের তরমুজের দাম ছিল ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে।

রোজার মাস শুরু হতে না হতেই ফল ব্যবসায়ীরা তরমুজের দাম বাড়িয়ে দেন কয়েকগুণ। বর্তমানে তরমুজের আকাশচুম্বী দামে ক্রেতারা একবারে দিশেহারা। এজন্য অনেকেই ফেসবুকে শুরু করেছেন তরমুজের দাম নিয়ে সমালোচনা। এমন সমালোচনা শুরু হলেও গতকাল পর্যন্ত বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে প্রশাসনের কোন অভিযান কিংবা তদারকি করতে দেখা যায়নি।

গতকাল বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে, তরমুজের দাম আকাশচুম্বী। মোরেলগঞ্জে দোকানের সামনে বেশ কয়েকজন ফল ব্যবসায়ী তরমুজ বিক্রি করতে বসে আছেন। ৪-৫ কেজি ওজনের একটি তরমুজের দাম হাকেন সাড়ে ৫০০ টাকা। এর চেয়ে বড় সাইজের একটি তরমুজের দাম জিজ্ঞেস করলে ৬০০ টাকা চান। ফল বিক্রেতা লাল মিয়া বলেন, আড়ৎ থেকেই আমরা বেশি দাম দিয়ে কিনে এনেছি। তাই দাম বেশি চাচ্ছি।

গতকাল দুপুরে মোরেলগঞ্জবাজারের  ফলের দোকানে তরমুজ কিনতে আসেন এক ব্যক্তি। কিন্তু তরমুজের অস্বাভাবিক দাম শুনে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। তিনি বলেন, ইফতারিতে এক টকুরো তরমুজ অনেকটা তৃপ্তি দেয়। কিন্তু দামের কারণে সেই তৃপ্তি আর মেটানো গেল না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তরমুজের দাম বেশি সম্পর্কে মোরেলগঞ্জের ফলের আড়তদার বলেন, মূলত তরমুজ ক্ষেত হয় বিশেষ করে উপকূলীয়এলাকার পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর,বাগেরহাট ও খুলনা  জেলায় তরমুজের উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি।। কয়েকদিন আগে বৃষ্টির বেশি পানিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ জন্য দাম এবার বেশি। বড় সাইজের তরমুজ প্রতি পিস সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা ও মধ্যম সাইজের তরমুজ ২৫০ টাকায় পাইকারি দামে তিনি বিক্রি করেছেন বলে জানান।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ অনুযায়ী, ফলের ক্ষেত্রে কেজিতে ১০ টাকা লাভ করতে পারবেন, এমন বিধান রয়েছে। তবে তরমুজের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনা আছে। কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকার বেশি লাভ করতে পারবেন না। আর কেজি বা পিস যেভাবে কিনবে সেভাবেই বেচতে হবে। কিন্তু মোরেলগঞ্জের ফল ব্যবসায়ীরা এমন নিয়ম মানছেন না বলে রয়েছে অভিযোগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আমরা ভোক্তা অধিকারের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে মনিটরিং করতে বলেছি। বাজারের সার্বিক বিষয়টি তদারকি করতে একটি টিম গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর