নিজস্ব প্রতিবেদক: বাসক ভারত উপমহাদেশীয় ভেষজ উদ্ভিদ। বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা করে দেয়। ফলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহমূলক ব্যধিতে বিশেষ উপকারী। তাই তো গাইবান্ধা জেলায় বাসকের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মো. মনির হোসেন-
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্চ উপজেলার শ্রীপুর, কাপাসিয়া, চন্দ্রীপুর, হরিপুর ও কনচিবাড়ী ইউনিয়নে স্থানীয় এনজিওর সহায়তায় ২৩১টি দল গঠন করা হয়। দলগুলো নারী-পুরুষ উদ্যোক্তাদের মাধ্যেমে বাসক চাষের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রত্যেক দলে সদস্য ৫-১৫ জন। বাসক চাষের মাধ্যমে এসব পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা দেখা দিয়েছে।
২৩১ দলের সদস্যরা বাড়ির আশেপাশে পতিত জায়গায় বাসক চাষ করছে। চাষে অতিরিক্ত কোনো খরচ নেই। আয়ের পাশাপাশি বাড়িতে নিরাপত্তার জন্য আর অতিরিক্ত ঘের-বেড়ার প্রয়োজন হয় না। আর জমির আইলে চাষ করলে ছাগল-গরু থেকে রক্ষা পাচ্ছে ফসল।
ইউনিয়নগুলোর রাস্তার দুই পাশে লাগানো হয়েছে বাসক গাছ। ওষুধি গুণাগুণ সম্পন্ন বাসক পাতার চাষ সম্প্রসারণে তেমন কোনো খরচ নেই। বাসকের ডাল কেটে মাটিতে রোপণ করলেই বংশ বৃদ্ধি হতে থাকে। বাসকের পাতা ছিঁড়লে গাছ মরে না। নতুন পাতা গজায়। সারা বছরই নতুন পাতা গজায়। পাতার গন্ধের কারণে গরু-ছাগল এসব খায় না। এমনকি ছত্রাক বা পোকা-মাকড়ও জন্মায় না।
ওষুধ কোম্পানিগুলো শুকনা বাসক পাতা কিনে নিয়ে যায়। এর ওষুধিগুণ এত বেশি যে, এ পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে কাশির সিরাপ। বাসক পাতার নির্যাস, সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা করে। ফলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালির অসুখ সারাতে বেশ উপকারী। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় বাসক পাতার ব্যবহার রয়েছে। তাই বাসক চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের।
স্থানীয় উদ্যোক্তা মোসা. সুফিয়া বেগম জানান, তিনি ৪-৫ বছর ধরে বাসক চাষ করছেন। বাসক গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করে সেগুলো শুকনো করেন। নির্দিষ্ট সময়ে ওষুধ কোম্পানির গাড়ি আসে। গাড়িতে মণ হিসেবে পাতার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১০০০-১৫০০ টাকা। তবে দাম মাঝে মাঝে ওঠা-নামা করে।
কৃষি সেবা সংগঠনের সদস্য মো. আঙ্কুর মিয়া জানান, তিনি সুন্দরগঞ্চ উপজেলার শ্রীপুর, কাপাসিয়া, চন্দ্রীপুর, হরিপুর ও কনচিবাড়ী ইউনিয়নে ২৩১টি দলের প্রতিটি বাড়িতে যাওয়া-আসা করেন। নতুন কেউ বাসক চাষ করতে চাইলে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তারা বাসকের পাতা বিক্রিসহ যাবতীয় সহযোগিতা করে আসছেন।