,

বরগুনায় ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান

বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনার আমতলী উপজেলায় ১৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ৩৫টি। এ সকল ভবনগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। যেকোনো মূহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে উপজেলার বেশ কয়েকটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, যে সকল বিদ্যালয়ে ২টি ভবন আছে সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি সিলগালা করে দিয়ে পার্শ্ববর্তী অপর ভবনে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন। সে ভবনের অবস্থাও তেমন ভাল না সেখানে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করেন। আবার যে সকল বিদ্যালয় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে সেটা সিলগালা করে তার পাশে টিনসেট ঘর তুলে পাঠদান অব্যাহত রেখেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে গাদাগাদি করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে থেকে ৩৫টি ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকা করে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। এ সকল ভবনে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছেন। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন সময়ে ছাদের পলেস্তারা ভেঙে শিক্ষার্থীদের শরীরে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে বই খাতা ভিজে একাকার হয়ে যায়। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেয়।

উপজেলার মহিষডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেহেনা পারভীন মুঠোফোনে জানান, বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের মধ্যে একটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় চলতি বছরের আগস্ট মাসে তা সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বিদ্যালয়ের পাঠদান অব্যাহত রাখার জন্য অপর ভবনের দুটি রুমে গাদাগাদি করে ক্লাস নিচ্ছি। সে ভবনের রুম দুটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

উত্তর ঘটখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুন নাহার শাহিদা বেগম জানান, বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। এতে শিক্ষার্থীদের বই খাতা ভিজে যায়। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে না। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন জেলা শিক্ষা অফিসার।

মধ্য আড়পাঙ্গাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের ভবনটির ছাদ দিয়ে পানি পড়ায় গত ৬ মাস পূর্বে ভবনটিতে তালাবন্ধ করে রেখেছি। শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে আমাদের বেশ সমস্যা হচ্ছে।

দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া জগৎচাঁদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল্লাহ জানান, চলতি বছরের মার্চ মাসে স্কুল ভবন ধসে পড়ে। এ কারণে ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছিল।

ভায়লাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. মান্নান জানান, আধা পাঁকা ৪ রুমের একটি টিনসেট ভবন যার টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে ও ওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে।

অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, বর্ষার সময় ছাদ দিয়ে পানি পড়ার কারণে আমাদের ক্লাস করতে সমস্যা হয়। অনেক সময় ছাদের পলেস্তারা ভেঙে আমাদের গায়ে পড়ে। তখন ক্লাস করতে অনেক ভয় হয়।

আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মুজিবুর রহমান বলেন, এ উপজেলায় ৭০টি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আমরা সিলগালা করে দিয়েছি। বিকল্প হিসেবে এ সকল ভবনের পাশে টিনের ঘর তুলে স্কুলের পাঠদান অব্যাহত রেখেছি। এখনো অনেক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে।

এই বিভাগের আরও খবর