,

প্রভাবশালীর মেয়ের সাথে প্রেম, যুবকের মৃত্যু নিয়ে ‘ধুম্রজাল’

জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: প্রেমঘটিত কারণে অসিত বৈরাগী (২২) নামে এক যুবকের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিপক্ষ বলছে বিষপানে আত্মহত্যা করে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি অসিতকে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রেমিকার প্রভাবশালী পরিবারের লোকজন। এ নিয়ে এলাকার জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়া গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

গত সোমবার (২৮ মে) গভীর রাতে অসিত বৈরাগী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। অসিত বৈরাগী গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার গোপালপুর গ্রামের অনাদী বৈরাগীর ছেলে। অসিত রাজমিস্ত্রির সহকারি হিসেবে কাজ করতো।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের আড়কান্দি গ্রামের অসিতের সঙ্গে প্রতিবেশী প্রভাবশালী মানি তালুকদারের মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী মনিরা খানমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের টানে গত ২৫ মে অসিত বৈরাগী প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরের দিন মনিরার বাবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামের লোকজন নিয়ে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন। সালিশীতে অসিতের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে গ্রামছাড়া করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সালিশের পর মনিরা তার বাবার বাড়িতে ফিরে আসে। ওই রাতে মনিরাকে তার মামা বাড়ি হাতিয়াড়া গ্রামে পাঠিয়ে দেয় তার পরিবারের লোকেরা। এদিকে, সালিশের রায় অনুযায়ী অসিতের মা লতিকা বৈরাগী ২৭ মে গরুসহ সহায়-সম্বল বিক্রি করে মেয়ের বাবার হাতে ৩ লাখ টাকা দিয়ে গ্রাম ছেড়ে টুঙ্গিপাড়ায় চলে যায়। একই দিন আবারও সেই প্রেমিক-প্রেমিকা পালিয়ে যায়। এতে প্রেমিকার বাবা প্রভাবশালী মানি তালুকদার ক্ষিপ্ত হয়ে অসিতের মা ও খালু পবিত্র মণ্ডলকে ধরে এনে নিজ বাড়িতে আটকে রাখেন। ২৯ মে প্রেমিকার বাবা বাদী হয়ে কাশিয়ানী থানায় ৭ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও পাচার মামলা করে প্রেমিকের মা ও খালুকে পুলিশে সোপর্দ করেন। ৩০ মে পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। এ খবর জানতে পেরে ৩০ মে দুপুরে অসিত-মনিরা বাড়ি ফিরে জানায় তারা বিষপান করেছে। এ সময় মনিরার দুই ভাই আশিক-হাসিব ও প্রতিবেশি মোহাম্মাদসহ পরিবারের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে অসিতের বাড়িতে গিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করে গুরুতর আহত করে। পরে প্রভাবশালী মানি তালুকদারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার জন্য অসিত ও মনিরাকে রামদিয়া বাজারে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা খারাপ দেখে ওই চিকিৎসক তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। পরে তাদের দু’জনকে উভয়ের স্বজনেরা গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। অসিতের অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অসিত মৃত্যুবরণ করে। মেয়ের বাবার করা মামলায় অসিতের মা জেলে থাকায় তিন দিন পর বৃহস্পতিবার বিকালে অসিতের মরদেহ সৎকার সম্পন্ন করা হয়।

এ ঘটনাটি চাপা দিতে এলাকার একটি মহল মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় এখন পর্যন্ত মামলা করতে সাহস পায়নি নিহতের পরিবার। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন ওই সংখ্যালঘু পরিবারটি। তবে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

অসিতের মা লতিকা বৈরাগী বলেন, ‘ভালোবাসার টানে ঘরছাড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের ওপর প্রভাবশালী ওই পরিবারটি অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। তারা আমাদের বাড়িতে আটক রেখেছে। পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের জেলে পাঠিয়েছে। এটি সইতে না পেরে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে বিষপান করেছে। পরে আমার ছেলেকে তারা মারধর করে। আমার ছেলে মারা গেছে। আমি এর ন্যায়বিচার চাই।’

প্রেমিকার বাবা প্রভাবশালী মানি তালুকদার সালিশ বসিয়ে ৩ লাখ টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে ওই ছেলের কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। প্রথম দফা তারা আমার মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার পরও ফিরিয়ে দিয়েছিল। পরে আবার তারা মেয়ের মামাবাড়ি থেকে তাকে অপহরণের পর পাচার করতে চেয়েছিল। এ ঘটনায় আমি মামলা করেছি। তিনি অসিতের পরিবারকে গ্রামছাড়া বা কোনো চাপ প্রয়োগ করেননি বলেও দাবি করেন।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাশিয়ানী থানার এসআই আলমগীর হোসেন বলেন, মেয়ের বাবার করা মামলার তদন্ত চলছে। আমি সালিশের কথা শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অসিতের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর