,

পাট নিয়ে বিপাকে শরীয়তপুরের চাষিরা

জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর: শরীয়তপুরে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। পাট জাগ দিতে না পারায় ভালো ফলনের পরও লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। এবার পাটের মান ভালো না হওয়ায় ঢাকার পাইকাররাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ফলে পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ২৭ হাজার ৭২৮ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে ২৯ হাজার ৫৬৯ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪০ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। খরায় পাটের গুণগত মানে পরিবর্তন হয়েছে। গত বছর এই সময় বাজারে প্রতি মণ পাটের দাম তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা থাকলেও এ বছর সেই পাট ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শরীয়তপুরের জাজিরা অঞ্চলে পানি বেশি হওয়ায় পাঠ পরিপক্ক না হতেই কেটে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে জেলার ভেদরগঞ্জ, গোসাইরহাট, ডামুড্যা ও নড়িয়া অঞ্চলে পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা। পাঠ কেটে মাঠে ফেলে রেখেছেন অনেকেই। আবার অনেকে বাড়ির পাশে ছোট ডোবায় পাট জাগ দিচ্ছেন।

পাটচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার পাটের গাছ ভালো হয়েছে। কিন্তু পরিপক্ক হওয়ার আগে কাটা ও পানি না থাকায় জাগ দিতে সমস্যা হওয়ায় পাটে লোকসান গুনতে হবে। এবার পাটের ভালো ফলন হবে, কিন্তু পাটের আঁশের মান ভালো হবে না।

পাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর এই সময়  পাটের মণ ছিল তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। তাও মোটামুটি মানের পাট। কিন্তু এ বছর পাটের মান ভালো না, ফ্রেশ পাট বাজারে আসছে না। তাই দামও বেশি যাচ্ছে না। পাটের মান ভালো না হওয়ায় ঢাকার পাইকাররা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

জাজিরা উপজেলার পাটচাষি খালেক হাসেম মিয়া বলেন, আমাদের এখানে বন্যার কারণে পাট পরিপক্ক না হতেই কেটে ফেলা হয়। কারণ বিলে পানি জমে ছিল। এতে করে পাটের গোড়ার পচন ধরতে শুরু করেছিল। তাই দ্রুত পাট কাটা হয়। এখন সেই পাট নিয়ে পড়েছি মহাবিপাকে। পাটের মান ভালো হয়নি। তাই বড় অংকের লোকসান গুনতে হবে।

আরেক চাষি আনেয়ার হোসেন বলেন, ২০ বিঘা জমিতে আমি পাট রোপণ করেছি। যা খরচ করেছি তা উঠবে বলে মনে হয় না। বাজারে পাটের দাম কম। তার থেকে বড় কথা পাট কিনছেন না আড়ৎদাররা। তারা বলছেন- পাটের মান ভালো না তাই তারা কিনছেন না।

এদিকে ভেদরগঞ্জ এলাকার চাষি মোক্তার মিয়া বলেন, প্রতিবছর এই সময় বিলে থই থই পানি থাকে। তখন পাট জাগ দিয়ে টেনে এনে আঁশ ছড়াতাম। কিন্তু এবার বিলে পানি নেই, মাথায় করে পাট ছোট খালে আনতে হচ্ছে। পাট মরে যাচ্ছে, পাটের আঁশ শুকিয়ে যাচ্ছে। পাট নিয়ে ক্ষতির মধ্যে আছি। ।

আরেক চাষি বাচ্চু ভূইয়া বলেন, পানির কারণে পাট রাখা যাচ্ছে না। আগাগোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে, শুকিয়ে যচ্ছে। পাট সাধারণত লাল ও পরিষ্কার হয়। কিন্তু এবার সেই পাট কালো হয়ে যাচ্ছে। পানি নেই তাই পাট এনে জাগ দেওয়াও যাচ্ছে না। মাঠেই কেটে রাখা হচ্ছে। ভাগে ভাগে কাটা হচ্ছে পাট। পরিপক্ব হওয়ার পরও এবার মাঠ থেকে পাট আনতে পারছি না। যা আনি তা জাগ দেই। সেগুলো উঠানোর পর আরও কিছু পাট এনে জাগ দেই।

পাট ব্যবসায়ী অনিল পাল বলেন, পাটের মান ভালো না, তাই আমরা পাট কিনছি না। গত বছর এই সময় সপ্তাহে পাঁচ থেকে সাতটি পাটের ট্রলার ঢাকার পাইকারদের কাছে পাঠাতাম। কিন্তু এ বছর দুটি পাঠিয়েছি। তারা বলেছে ভালো পাট না হলে কিনবে না। আমরা এখন আছি বিপাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম রসূল বলেন, খরার কারণে এ বছর কিছুটা সময় দেরি করে পাট লাগানো হয়েছে। তাও কৃষকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেচ দিয়ে পাটের চারা লাগানো হয়। এরপরও তারা ভালো করছিল। কিন্তু সর্বশেষ জুন মাসের বন্যার করণে নিচু অঞ্চলের পাট পরিপক্ব হওয়ার আগেই কেটে ফেলতে হয়েছিল।

এই বিভাগের আরও খবর