,

পাকা রাস্তা দেখে যেতে চান বিমলা

জেলা প্রতিনিধি, বাগেরহাট: বাগেরহাট সদর উপজেলার বাসিন্দা নারী বিমলা সাহা। পরিবারের দাবি, তিনি শতবর্ষী। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে তার মনে দুঃখ জমা পড়েছে নিজের গ্রাম গাঁওখালী নিয়ে। কারণ উপজেলার সঙ্গে তার গ্রামের সংযোগ সড়কটির অবস্থা বেহাল।

মাত্র দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়কের কারণে দুর্ভোগে পড়েছে গ্রামের বাসিন্দারা। রিকশা বা ভ্যান তো দূরে থাক, সাইকেলেও চলাচল করা যায় না রাস্তাটি দিয়ে। তাই শেষ জীবনে বিমলা সাহার একটিই চাওয়া। তার গ্রামের ওই সড়কটি যেন পাকা করে দেয়া হয়, আর সেটি যেন তিনি দেখে যেতে পারেন।

বিমলা সাহা বলেন, ‘সরকার যায় আবার আসে, কিন্তু আমাদের সড়ক ঠিক হয় না। ভোটের আগে অনেক বলে, এবার জিতলে সড়ক ঠিক করে দেয়া হবে। ভোটের পর আর কারও মনে থাকে না। সারাজীবনের স্বপ্ন আমার, কবে এ সড়কটুকু পাকা হবে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে হবে।’

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার গোটাপাড়া ইউনিয়নের গ্রামটিতে দেখা যায়, বৃষ্টি হওয়ায় কাদা-পানিতে ডুবে আছে সড়কটি। গাঁওখালী-রঘুনাথপুর হয়ে মূল সড়কে আসার এই দুই কিলোমিটার রাস্তা দুই দশক আগে ইটের সলিং দিয়ে তৈরি করা হলেও কোথায় কোথায় ইটগুলো উঠে গিয়ে সড়ক ভেঙে পড়েছে। এতে অল্প বৃষ্টি ও পাশের নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লেই সড়কসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্মিত বাঁধটি ডুবে যায় বলে জানা গেছে। এতে গ্রামবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়ে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের।

গাঁওখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র বাধন সাহা বলে, ‘স্কুলে যাওয়ার সময় প্রায়ই কাদায় স্লিপ করে পড়ে যায় অনেক সময়। তখন আবার বাড়ি গিয়ে আবার পোশাক পরিবর্তন স্কুলে যেতে হয়। এতে অনেকেই স্কুলে টাইমলি পৌঁছাতে পারে না।’

একই স্কুলের ছাত্রী সুমি বলে, ‘গতকালও (বৃহস্পতিবার) আমাদের দুই বন্ধু পানির মধ্যে পড়ে গেছে। হাঁটু সমান পানির মধ্য দিয়ে আসতে আমাদের খুব ভয় লাগে।’

অভিভাবক কালাম শেখ বলেন, ‘বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। কখনও না কাদায় পড়ে বা পানিতে ডুবে। পাশে নদীতে জোয়ার এলে রাস্তায় পানি বাড়ে। তখন বড়রাই ঠিকমতো চলতে পারে না, বাচ্চারা কিভাবে চলবে।

কাদা মাটির কারণে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে কষ্ট হয়, তাই অনেকে আসতেও চায় না। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গাঁওখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চিত্তরঞ্জন সাহা।

গৃহবধূ লিলা রানী সাহা বলেন, ‘বৃষ্টি আর জোয়ারের কারণে অনেক সময় পানি সড়ক টপকিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তখন রান্নার চুলাটাও ডুবে যায় পানিতে। পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। রাস্তাটি সংস্কার ও পাকা করা হলে আমাদের দুর্ভোগ কমত।’

গাঁওখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইলিয়াস বালি বলেন, ‘গ্রামের মধ্যে ওই দুই কিলোমিটার রাস্তার কিছু জায়গার ইট উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি, তাই বৃষ্টি বা জোয়ারে অল্পতেই পানি আটকে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।’

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের সমস্যা নিয়ে এখন পর্যন্ত স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি আমাকে জানায়নি। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর