,

ধর্ষণচেষ্টার মামলা করায় বরখাস্ত হলেন শিক্ষিকা

মাদারীপুর প্রতিনিধি: মাদারীপুর সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তোফায়েল হোসেন ও নূরে আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও লাঞ্ছিত করার মামলা করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা।

গত বুধবার সকালে মাদারীপুর সদর থানায় মামলা করা হলেও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। জেলা শিক্ষা কার্যালয়ও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো ওই শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন অভিযুক্তদের সহকর্মী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ ওই শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন।

এ বিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৩০ এপ্রিল মাদারীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে উপস্থিত হয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তোফায়েল হোসেনের সঙ্গে অসদাচরণ করায় ওই শিক্ষিকাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর ৩ (বি) ধারা মোতাবেক চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

শিক্ষিকার করা মামলার নথি ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে পেশাগত কাজের জন্য সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে যান ওই শিক্ষিকা। সে সময় তার কয়েকটি ছবি তোলেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তোফায়েল। ছবি তোলার কারণ জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা ওই শিক্ষিকাকে পাশের আরেকটি নির্জন কক্ষে নিয়ে যান এবং সদ্য তোলা ছবিগুলোর সঙ্গে অশালীন ছবি যুক্ত করে সেসব ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন। একই সঙ্গে ওই শিক্ষিকাকে কুপ্রস্তাব দেন কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, পরে জোর করে ওই শিক্ষিকার বোরকা খোলার চেষ্টা করেন শিক্ষা কর্মকর্তা। সে সময় ধস্তাধস্তিতে শিক্ষিকার বোরকা ছিঁড়ে যায়। শিক্ষিকা তোফায়েলের রুম থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বাধা দেন নূরে আলম সিদ্দিকী। এ ঘটনার পরে শিক্ষিকা চিৎকার শুরু করলে তাকে ছেড়ে দেন তারা। বিষয়টি মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকে জানানো হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে পরদিন সকালে মাদারীপুর সদর থানায় মামলা করেন নির্যাতিতা শিক্ষিকা।

নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে বলা আছে, নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা কিংবা তার পরনের কাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানি ঘটালে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়। এ ব্যাপারে কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হলে কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারবে পুলিশ। তবে মাদারীপুরে ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও প্রভাবশালীদের কারণে তোফায়েল ও নূরে আলমকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। এদিকে মামলা করার কারণে প্রতিনিয়ত শিক্ষিকার চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন শিক্ষা কর্মকর্তা তোফায়েল ও নূরে আলম।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা বলেন, থানায় মামলা করেছি এক সপ্তাহের বেশি হয়েছে। পুলিশ আসামিদের ধরছে না। বরং তাদের সহযোগিতা করছে। কী কারণে ধরছে না, আমি বুঝতে পারছি না। আমার গায়ে হাত দিলো, কাপড় ছিঁড়ল, শ্লীলতাহানি করল, আমি বিচার পাই না। আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় আমি এখন শঙ্কিত। আমি একজন নারী। এ সমাজে, আইনের কাছে কি আমি বিচার পাব না? আমি দ্রুত তাদের গ্রেফতার ও বিচার চাই।

বরখাস্ত করার প্রসঙ্গে শিক্ষিকা বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অন্যায়ভাবে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। এর কোনো বিধান নেই। আমি যেন ভয়ে মামলা উঠিয়ে ফেলি এজন্য আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মাদারীপুর সদর মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) বারেক করিম জানান, সরকারি কর্মকর্তা বিধায় প্রক্রিয়া অনুযায়ী আসামিদের গ্রেফতার করা হবে। পরবর্তী বিষয় নিয়ে কাজ করছে পুলিশ।

এই বিভাগের আরও খবর