জেলা প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার পৌর এলাকার ছাব্বিশা গ্রামের কৃষক আরশেদ আলী। তিনি বাড়ির আঙিনার ৩৩ শতক জমিতে প্রতি বছর রবি মৌসুমে নানা ধরনের সবজি চাষ করেন।
এবার সেই জমির অর্ধেকাংশে তিনি পরীক্ষামূলক চীনের রঙিন ফুলকপি চাষ করে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলার পাশাপাশি উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় ভাসছেন। মাত্র ১৬ শতক জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বর্জন করে জৈব সার প্রয়োগে চার রঙের ফুলকপি চাষ করে দ্বিগুণ লাভবান হয়েছেন।
রবিবার(২৯ জানুয়ারি) সরেজমিনে জানা যায়, চীন দেশে এ জাতের ফুলকপি বেশি আবাদ হয়। এটা তারা সালাদ হিসেবে খেয়ে থাকেন। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি- দেখতে মনলোভা। বাংলাদেশে এ ফুলকপি অর্ধ সিদ্ধ করে খাওয়া ভালো- তাতে পুষ্টিগুণ অক্ষত থাকে।
অন্যান্য ফুলকপির চাষের যে পদ্ধতি ওই একই পদ্ধতিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়। খরচ ও পরিশ্রম একই। পাশাপাশি শুধু জৈব সার ব্যবহার করে এ ফুলকপি চাষ করা যায়। স্থানীয় হাটবাজার এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ভূঞাপুর উপজেলায় কৃষক আরশেদ আলীই এবার প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে রঙিন ফুলকপির চাষ করেছেন এবং খুবই ভালো ফলন হয়েছে- আশানুরূপ দামও পাচ্ছেন। তার এমন সফলতা দেখে স্থানীয় তরুণ-যুবক অনেক সবজি চাষি ওই জাতের ফুলকপি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এছাড়া তার ওই রঙিন ফুলকপির সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সাধারণ কৃষক ও উৎসুক জনতা ভিড় করছেন।
রঙিন ফুলকপি দেখতে এসে কেউ ফুলকপি কিনছেন, কেউ পরামর্শ নিচ্ছেন, কেউ রঙিন ফুলকপির সঙ্গে ছবি তুলছেন ও ভিডিও ধারণ করছেন। রঙিন ফুলকপি চাষে সফলতা পাওয়ায় স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও খুশি।
রঙিন ফুলকপি চাষি আরশেদ আলী জানান, ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ডক্টর হুমায়ুন কবীরের পরামর্শে তিনি কৃষি অফিস থেকে নতুন জাতের রঙিন ফুলকপির ৪০০টি চারা নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির অঙিনার ১৬ শতক জমিতে চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তিনি জৈব সার, পোকাদমনকারী কীটনাশকসহ সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছেন। জমিতে চার রঙের ফুলকপি উৎপাদিত হয়েছে। ফুলকপি ক্ষেতে তিনি কীটনাশকের পরিবর্তে শুধু জৈব সার ব্যবহার করেছেন।
তিনি জানান, জমিতে চারা রোপণের ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে ফসল পেয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো- এসব রঙিন ফুলকপি দেখতে প্রতিদিন এলাকার কৃষকসহ সাধারণ মানুষ তার জমিতে আসছেন। কেউ ফুলকপি কিনছেন, কেউ পরামর্শ নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ তুলছেন ছবি, করছেন ভিডিও। তাছাড়া বাজারে নেওয়া মাত্রই বিক্রি হয়ে যায় এসব রঙিন কপি। দামও ভালো পাচ্ছেন।
ভূঞাপুর পৌরসভার কুতুবপুর মহল্লার ভুট্টাচাষি মাহমুদুল হাসান। রঙিন ফুলকপি চাষের খবর পেয়ে ফুলকপি দেখতে এসেছেন। তিনি জানান, রঙিন ফুলকপির নাম অনেক শুনেছেন। কিন্তু স্ব-চোখে দেখতে পারেন নি। পাশের এলাকা ছাব্বিশার কৃষক আরশেদ আলী রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন জানতে পেরে তিনি দেখতে এসেছেন। তিনি প্রথম রঙিন ফুলকপি চাষ সম্পর্কে আরশেদ আলীর কাছ থেকে জেনে নিয়েছেন। আগামিতে তিনিও এই রঙিন ফুলকপি চাষ করবেন।
টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর, কালিহাতী, মধুপুর ও ঘাটাইল থেকে লোকজন দেখতে আসেন রঙিন ফুলকপি। রঙিন ফুলকপির ক্রেতা রফিকুল ইসলাম রবি ও আব্দুর রহিম মিঞা জানান, এ ধরনের রঙিন ফুলকপি এরআগে কখনো তারা দেখেন নাই। ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ডক্টর হুমায়ুন কবীরের ফেসবুকে পোস্টে রঙিন ফুলকপির ছবি দেখে কপি ক্ষেতে গিয়ে ৫০ টাকা দিয়ে মাঝারি সাইজের একটি ফুলকপি কিনেন।
ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ডক্টর হুমায়ুন কবীর জানান, ভূঞাপুর উপজেলায় এবারই প্রথম রঙিন ফুলকপি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুরুতে কেউ আগ্রহী ছিল না। পরে আরশেদ আলী নামে এক কৃষক আগ্রহ প্রকাশ করায় তাকে কৃষি অফিস থেকে ৪০০ ফুলকপির চারা, জৈব সার, পোকারোধক কীটনাশক ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। প্রাথমিকভাবে চার রঙের ফুলকপি চাষ করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আহসানুল বাসার জানান, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণের লক্ষ্যে জেলার ১২ উপজেলায় পরীক্ষামূলক রঙিন ফুলকপি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তারমধ্যে সবার আগে ভূঞাপুর উপজেলায় সফলতা পাওয়া গেছে। এ জাতের ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। ক্যান্সাররোধেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে এ ফুলকপি। চলতি মৌসুমে পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা পাওয়ায় অনেক কৃষক আগামি বছরে বাণিজ্যিকভাবে রঙিন ফুলকপি চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।