,

জৈব সার উৎপাদনে উদ্যোক্তা সোহেলের বিপ্লব

রানা আহম্মেদ অভি, ইবি: সোহেল মুস্তাফিজুর। একজন আইনজীবী, শিক্ষক ও সফল উদ্যোক্তা। ছোট্ট থেকেই ইচ্ছা ছিল দেশের জন্য কিছু করা। এমন কিছু একটা যা সারাদেশে সাড়া জাগিয়ে তুলবে। কিন্তু কী করবেন, শত ভাবনার পরেও বুঝতে পাচ্ছিলেন না।

ইতোমধ্যে পড়াশোনা শেষ। প্রথমে আইনজীবী, পরবর্তী সময়ে দেশের স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষাকতায় যুক্ত হলেও মূল লক্ষ্য ছিল নিজের এলাকা ও দেশের উন্নয়ন করা। সেই প্রবল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সব কিছু ছেড়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করলেন।

ভাবতে শুরু করেন একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার কথা। সফল ব্যবসায়ী বাবার অনুপস্থিতিতে তার প্রতিষ্ঠান চালাতেন তিনি। কৃষকদের দুর্দশা দেখে বাবার সঙ্গে পরামর্শ করেন। সেসব নিয়ে ইন্টারনেট ও বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে গবেষণা শুরু করেন। কৃষকদের কষ্ট ও দুর্দশা লাঘব করতে খুঁজে পেলেন জৈব সার উৎপাদনের কথা। শুরু করেন ‌‘মোল্লা এগ্রো সাইন্স’ নামে নিজ জেলা ঝিনাইদহে একটি অন্যতম কৃষি প্রতিষ্ঠান।

সোহেল মুস্তাফিজুরের কথা শুনতে পেরে স্থানীয় কৃষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকতারা খোঁজ খবর শুরু করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন নীতিমালার সমন্বয়ে পুরো উদ্যমে কাজ শুরু করেন তিনি। মাত্র ৬ মাসের মাথায় সফল হন। স্থানীয় কৃষকরা তার সারের ব্যাপক কার্যকারিতা দেখে সার কিনতে আসেন অফিসে। প্রায় পাঁচটি জেলায় ওয়ার্কশপ করেন, এর মাধ্যমে প্রচার হয় তার উদ্যোগের। এই ফার্ম থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে লাভ না হলেও প্রায় দুই বছরে কৃষকদের বোঝাতে ব্যয় হয়ে গেছে প্রায় ১০ লাখ টাকার উপরে। যা শুধু ব্যয়, সেখান থেকে কোনো লাভা আসেনি।

একজন আইনজীবী, শিক্ষক ও সফল উদ্যোক্তা সোহেল মুস্তাফিজুরের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে ফার্স্টক্লাস সেকেন্ড হন। এরপর তিনি একজন আইনজীবী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন। কিছুদিন পর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। উদ্যোক্তা হওয়ার আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে তিনি সবকিছু ছেড়ে দিয়ে আত্ম বিনিয়োগের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠেন।

সোহেল মুস্তাফিজুর বলেন, বাবার অবর্তমানে ব্যবসার সব দায়িত্ব আমার কাঁধে। ছোটবেলা থেকে এভাবে তার সাথে সহযোগিতা করে আসছি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার মতো একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে হতো। একদিন তার অবর্তমানে একজন কৃষকের জমির দুর্দশা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে একজন কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করি। কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতা ও বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যাত্রা শুরু। প্রায় পাঁচটি জেলায় মাঠ পর্যায়ে প্রায় দেরশত ওয়ার্কশপ করে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। সহযোগিতা পেলে সারাদেশে এর ব্যাপকতা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবো ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, ‘মোল্ল্যা এগ্রো সাইন্সের’ পাশাপাশি শিশুদের ইংরেজি ও আধুনিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থায় ‘বুকম্যান স্টুডেন্ট কেয়ার’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছি। যেখানে সরাসরি যুক্তরাজ্য থেকে নিয়মিত অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান হয়। এ ছাড়াও, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় একঝাঁক মেধাবী শিক্ষার্থী এখানে কর্মরত। মোট দুইটি প্রতিষ্ঠানে ৩৫ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি।

সোহেল মুস্তাফিজুরের ‘সোনার দানা’ ও ‘এম গোল্ড’ সারের সুফল পাচ্ছে আশেপাশের কমপক্ষে পাঁচ জেলার কৃষকরা। তারা জানান, বাজারে রাসায়নিক সারের দাম অতিরিক্ত। এই সারের দাম আমাদের নাগালের মধ্যে ও অন্য সারগুলো থেকে কম। এদিকে এই সার দিয়ে অন্যান্য সারের তুলনায় বেশি সুফল পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়াও, জৈব সারগুলো ব্যবহারে ফসলের অনেক রোগ কমে যাচ্ছে।

কৃষি খাতে কর্মরত কৃষিবিদরা বলেন, জৈব সার উৎপাদনে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সোহেল মুস্তাফিজুর। এই অঞ্চলে এমন বাণিজ্যিক ও বৃহৎ অনুসারে সোহেল মুস্তাফিজুরই প্রথম উদ্যোক্তা। আমরা তার কাজকে সাধুবাদ জানাই ও আমরা তাকে সব দিক থেকেই সাহায্য সহযোগিতা করবো।

উপজেলা কৃষি অফিসার আকরাম হোসেন বলেন, মোল্লা এগ্রো সাইন্সের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। তারা এলাকা ও কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের কাছে ইতোপূর্বে সহযোগিতা বা পরামর্শ চাইলে আমরা তাদের সে তথ্যগুলো দিয়ে সহযোগিতা করছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা এই বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আবারও তাদের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবো। তাদের এই কাজ দেখে অনেকে অনুপ্রাণিত। বিভিন্ন জেলায় ওয়ার্কশপ করে এলাকার নাম ফুটিয়ে তুলছেন। আমরা ভবিষ্যতে তাদের যেকোনো তথ্য ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রয়োজন হলে কৃষি অধিদপ্তরের সব সুবিধা প্রদান করবো।

এই বিভাগের আরও খবর