বিডিনিউজ ১০ ডটকম: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা বৈশাখী ভাতার টাকায় ২শ’ অসহায় পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে নতুন বছরকে ভিন্নভাবে বরণ করে নিয়েছেন।
তবে তাদের এ বর্ষবরণে ছিল না কোন আনুষ্ঠানিকতা। কোন কর্মকর্তাই পড়েনি কোন নতুন পোশাক। আয়োজন করা হয়নি পান্তা-ইলিশে বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। তারা এ বর্ষবরণকে উৎসর্গ করেছে অসহায় মানুষের জন্য।
এসব কর্মকর্তা তাদের নিজেদের বৈশাখী ভাতার টাকা দিয়ে প্রায় ২ শতাধিক ঘরবন্দী কর্মহীন অসহায় দরিদ্র মানুষদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট পৌছে দিয়েছেন। যতদিন করোনা সংকট থাকবে ততদিন কোটালীপাড়ায় কর্মরত কর্মকর্তা তাদের বেতনের একটি অংশ এসব মানুষদের জন্য ব্যয় করবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান।
তবে আগামীতে তারা ভিন্ন ভাবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করবেন বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
এ ক্ষেত্রে টিম কোটালীপাড়া নামে একটি ফেসবুক পেইজ খোলা হয়েছে। চালু করা হয়েছে একটি মোবাইল সেবা হটলাইন। অসহায় মানুষদের পক্ষ থেকে এই ফেসবুক পেইজ বা মোবাইর হটলাইনে যোগাযোগ করলেই তাদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেওয়া হবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের এই উদ্যোগকে উপজেলার বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বাগত জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে উপজেলা সদরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। করোনাভাইরাসের কারণে বিগত ১ মাস ধরে আমার ব্যবসা বন্ধ। বর্তমানে সংসার চালানো আমার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে পহেলা বৈশাখের দিনে আমার বাড়িতে তিনি গোপনে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিয়েছেন।’
উপজেলার কুশলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল বলেন, আমাদের উপজেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তগণ যে উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে তা অত্যন্ত প্রশাংসার দাবি রাখে। এসব কর্মকর্তাগণ তাদের রুটিন মাফিক দাপ্তরিক কাজের বাহিরে এসে এই দূর্যোগময় সময়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা তাদের নিজেদের বেতন দিয়ে নিরন্ন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন। এটা কোটালীপাড়ায় একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কোটালীপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক রতন সেন কংকন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া অনেক শ্রমজীবী মানুষ আছে যারা প্রকাশ্যে ত্রাণ নিতে পারে না। আবার ক্ষুদার জ¦ালা সহ্যও করতে পারে না। এসব মানুষদের কথা চিন্তা করে ইউএনও এস এম মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে সরকারি কর্মকর্তারা টিম কোটালীপাড়া গঠন করেছেন। এই টিম কোটালীপাড়া ত্রাণ বিতরণের জন্য যে ফেসবুক পেইজ ও মোবাইল সেবা হটলাইন চালু করেছেন তা একটি ভাল উদ্যোগ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা টিম কোটালীপাড়া আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে জাতির এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে থাকতে চাই। যে সকল পরিবার দেখতে স্বচ্ছল কিন্তু প্রকৃত পক্ষে অস্বচ্ছল এবং সংকোচে কাউকে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারে না আমরা এ সকল মানুষদের নিরবে সেবা দিতে চাই।