,

কেমন আছে ঘূর্ণিঝড়ে জন্ম নেওয়া শিশু সিডর?

২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে জন্ম নেওয়া শিশু সিডর সরকার

বাগেরহাট প্রতিনিধি: সুপার সাইক্লোন সিডর যখন বাগেরহাটে আঘাত হানে তখন নিজে ও অনাগত সন্তান বাঁচতে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিলা গ্রামের একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে যান সন্তানসম্ভবা এক গৃহবধূ। প্রলংয়কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের তাণ্ডব চলাকালে ওই রাতেই মোংলার চিলা গ্রামের খ্রিস্টান মিশনারির সেন্ট মেরিস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কানাইনগর গ্রামের গৃহবধূ সাথী সরকার জন্ম দেন একটি ছেলে শিশু। যার নাম রাখা হয় সিডর সরকার।

সিডরের রাতে জন্ম নেওয়া শিশুর (সিডর) খবর স্থান করে নেয় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এরপর থেকে অনেকেই সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দিতে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ একযুগ পরও এসে আশ্বাস ছাড়া ভাগ্যে কিছুই জোটেনি শিশু সিডর সরকারের। সিডর চলাকালে জন্ম নেওয়া সিডর সরকারের পরিবারকে এখনো দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া সিডর সরকারের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া এখন দায় হয়ে পড়েছে।

জন্মের পর সিডরের মা-বাবাকে অনেকে তার পড়াশুনার দায়িত্ব নেওয়া ও জমি কিনে বাড়ি করে দেওয়াসহ অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কেউ রক্ষা করেনি। তাই অভাবের তাড়নায় এখন পড়াশুনা চালিয়ে যেতে সিডরকে ঘর ছেড়ে থাকতে হচ্ছে বহুদূরে খ্রিস্টান মিশনারি হোমে।

সিডরের দাদী রিভা সরকার (৬৫) বলেন, সিডরে জন্ম নেওয়ার পর একটি জাতীয় পত্রিকা সিডরের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেবে বলে জানায়। এমনকি প্রতিশ্রুতি দেয় জমি কিনে বাড়ি করে দেওয়ার। শিশু সিডরের ছবি দিয়ে পত্রিকার ক্যালেন্ডার ছাপানো হয়। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি রাখেনি। ওই পত্রিকার কারণে অন্য এনজিওরা আমাদের কোনো সাহায্য করেনি।

এনজিও থেকে বলা হয়, তোমরা তো ওদের (পত্রিকা) কাছ থেকে অনেক পেয়েছ। আসলে আমাদের ভাগ্যে জোটেনি কোনো সহায়তা। আমরা অতিদরিদ্র। সিডরের বাবা জর্জি সরকার মাছ ধরে সুন্দরবনে। মা কাজ করে অন্যের বাড়িতে। তবে, ‘সরকারের জমি আছে- ঘর নেই প্রকল্প’ থেকে একটি ঘরসহ কিছু সহায়তা পেয়েছি।

রিভা সরকার আরও জানায়, আমাদের আয়ে সংসার চলে না, সিডরের পড়াশুনার খরচ চালাব কেমন করে। অর্থাভাবে এক বছর লেখাপড়া বন্ধ থাকার পর তাকে একটি মিশনারি হোমে ভর্তি করে দেওয়া হয়। সিডর এখন খুলনার দাকোপ উপজেলার লাউডোপ ইউনিয়নের হরিণটানায় ‘লাভ ইউ নেভার’ মিশনারি হোমে থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। পরিবারের পক্ষ থেকে তার অর্ধেক খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সিডরের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন দাদী রিভা।

মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাহাত মান্নান জানান, সিডরের সময় জন্ম নেওয়া শিশু সিডরের পরিবারকে সরকারি ঘরসহ সহায়তা করা হয়েছে। এই পরিবারকে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর