শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: মুলা শীতকালীন সময়ের অন্যতম প্রধান সবজি হলেও এবার আগাম মুলা চাষে সফল হয়েছেন কুমিল্লার গোমতী নদী চরের মুলা চাষিরা।
সাদা মুলার মুক্ত হাসিতে কৃষকের শরীর, মন ও দেহ এখন সতেজ। আগাম মুলা চাষে এত ভালো ফলন হবে এতটা তারা আশাও করেননি। পাইলট প্রজেক্টের আওতায় এবার সফল হওয়ায় আগামীতে দ্বিগুণ চাষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
যে কোনো সবজির জন্যই কুমিল্লার গোমতী নদীর চরের মাটি বেশ উপযোগী। আর এ চরের মুলার বেশ সুনামও রয়েছে। মুলা শীতকালীন ফসল হলেও বাণিজ্যিকভাবে সবজি উৎপাদনকারী চাষিরা এ বছর শীতের আগেই মুলা উৎপাদন করেছেন। ফলন হয়েছে বেশ। আবহাওয়াও ছিল অনুকূলে। যার ফলে এ বছর গোমতীর চর জুড়ে বাম্পার ফলন হয়েছে মুলার।
বৃহস্পতিবার(২২ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চরজুড়ে রয়েছে সাদা মুলা আর সবুজ পাতার এক অপূর্ব সম্মিলন। যে দিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। বিঘা বিঘা জমি জুড়ে চাষ হয়েছে মুলা। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনকারী সবজি চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মুলা চাষে।
কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার সুবর্ণপুর, জালুয়াপাড়া, টিক্কারচর, শালধর, বুড়িচং উপজেলার, আলেখারচর, বালিখাড়া, ভান্তি, ভুরবুরিয়া,মিথিলাপুরসহ গোমতী চরের আরো বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, চরজুড়ে শুধু সাদা মুলা।
মুলা চাষি আমীর হামজা মজুমদার জানান, আমরা সাধারণত শীত মৌসুমে এই চড়ে মুলা চাষ করে থাকি। কৃষি অফিসের পরামর্শে ও আর্থিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার আশায় এ বছর আগাম মুলা চাষ করি। আবহাওয়া ভালো থাকায় বিশেষ করে পরিমিত বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ বছর চরে কমপক্ষে সহস্রাধিক একর জমিতে মুলা চাষ হয়েছে। শীতকালীন এই ফসলের দাম ভালো পেতে শীতের আগেই মুলা উৎপাদন করেছেন।
বাণিজ্যিকভাবে সবজি উৎপাদনকারী কৃষক চাষি আহমেদ জানান, তিনি এ বছর প্রায় চল্লিশ শতক জমিতে মুলা চাষ করেছেন। সব কিছু ভালো থাকলে ফলন ভালো হবে। খরচ আঠারো হাজার টাকা বাদ দিলেও প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার বেশি মুনাফা হবে।
তবে মুলাসহ চরে যে কোনো সবজি আগাম উৎপাদনে তিনটি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন কৃষক লিয়াকত হোসেন।
তিনি জানান, এক, চরে ফসলের চারা নষ্টে কেঁচোর উপদ্রব বেশি। সরকারিভাবে যদি কৃষকদের কমমূল্যে কেঁচোর ওষুধ সরবরাহ করা হয়।
দুই, মুলাসহ চরে উৎপাদিত সবজি স্থানীয় বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে সরবরাহে সরকারি সুযোগ সরবরাহ বৃদ্ধি করা।
তিন, চরে উৎপাদিত সবজি পাইকার বাজার থেকে খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য নেয়া পর্যন্ত মধ্যস্বত্বভোগী বা ফড়িয়াদের দৌরাত্ম বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। তাহলে প্রান্তিক কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন তেমনি সবজি রফতানি করে দেশের রাজস্ব বৃদ্ধি করাও সম্ভব হবে।
গোমতী নদী সংলগ্ন বালিখাড়া গ্রামের মুলা চাষি মোহাম্মদ আলী বলেন, অনেক চাষিরাই আগাম মুলা চাষ এবার প্রথমবারের মত করলেও আমি বেশ কয়েক বছর ধরে করে আসছি। মৌসুমে দুই শতক জমিতে মুলা চাষ করতে যে পরিমাণ খরচ হয় মৌসুম ছাড়া একই জমিতে একই চাষ করতে খরচ অনেক কম পড়ে। বিশেষ করে শ্রমিক খরচ অনেক কম হয় আবার অনেক শ্রমিকও পাওয়া যায়। আরেক দিক থেকে ভালো দামও পাওয়া যায়।
তিনি জানান, বর্তমানে আমরা পাইকারি বাজারে ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা মণ বিক্রি করছি। যা কেজি প্রতি ৩০-৩৫ টাকা পড়ছে। আর খুচরা বিক্রেতারা ক্ষেত্র বিশেষ ৪০-৫০ টাকা ধরে বিক্রি করছে।
কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) তারিক মাহমুদুল ইসলাম জানান, কুমিল্লার মাঠে মাঠে আগাম সবজি চাষে কৃষকরা এখন মেতে উঠেছে, এটা ইতিবাচক দিক।
তিনি বলেন, মুলা চাষ যে শুধু নদীর চরে ভালো হয় তা নয়। এটি পলি মাটিতেও ভালো ফলন হয়। তিনি সবাইকে আরো বেশি বেশি আগাম সবজি চাষে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
কৃষকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে কথা বলেন কুমিল্লা আঞ্চলিক কৃষি অধিদফতরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শহিদুল হক জানান, আমরা চাই কৃষকরা সবজি উৎপাদনে আরো সমৃদ্ধ হোক। সে লক্ষ্যে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কৃষকদের জন্য কীটনাশক, সার সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় সব পরামর্শ দেয়া হবে।