জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: অতিরিক্ত বেতন ও পরীক্ষার ফি নেওয়ার অভিযোগ তুলে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ঢুকে শিক্ষকদের মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে একই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্যের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে উপজেলার ওড়াকান্দি মীড উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষকরা জানান, অতিরিক্ত বেতন ও পরীক্ষার ফি নেয়ার অভিযোগ তুলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আমিনুর রহমান শিকদার ও খলিল মোল্যা কয়েকদিন ধরে প্রতিটি শ্রেণি কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বেতন-পরীক্ষার ফি না দেওয়ার জন্য বুঝান এবং দায়িত্বরত শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। সোমবার ওই সদস্যরা বিদ্যালয়ে এসে বেতন-ফি আদায় না করার জন্য শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে যান। মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি দিতে বিদ্যালয়ে আসলে ওই দুই সদস্য তাদেরকে নিষেধ করেন। কিছুক্ষণ পর ওই দুই সদস্য বহিরাগত কিছু লোকজন নিয়ে অতর্কিতভাবে অফিস কক্ষে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে হুমকি দেন এবং তাঁর সাথে উগ্র আচরণ করেন। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষককে মারধর ও টেনে-হেঁচড়ে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। এ সময় অফিস কক্ষে বসা অন্যান্য শিক্ষকরা বাঁধা দিলে তাদের ওপরও হামলা চালায় ও লাঞ্ছিত করে ওই দুই সদস্য এবং তাদের লোকজন। ছিনিয়ে নেয় শিক্ষকদের মুঠোফোন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এ সময় ভয়ে শিক্ষকরা অনেকে অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও কর্মচারীরা।
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনামিকা, বর্ষা ও নুর আলম জানায়, ‘বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দুইজন সদস্য অতর্কিতভাবে স্কুলের অফিস কক্ষে ঢুকে শিক্ষকদের মারধর ও লাঞ্ছিত করেছে। স্কুলের অফিস কক্ষে ঢুকে শিক্ষকদের গায়ে হাত দেওয়া, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন তারা।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুব্রত ঠাকুর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘নতুন কারিকুলামে মূল্যায়ন পরীক্ষার ব্যয় বাড়ায় অন্যান্য স্কুলের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে রেজুলেশন করে বেতন-ফি কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কতিপয় সদস্যরা অহেতুক অভিযোগ তুলে শিক্ষকদের সাথে বাড়াবাড়ি করেছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। আমি এর নিন্দা জানাই।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ মন্ডল বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দুইজন সদস্য বহিরাগত লোকজন নিয়ে অফিস কক্ষে ঢুকে আমার সাথে উগ্র আচরণ করে এবং আমার হাত ধরে টানা-হেঁচড়া করে। আমার শিক্ষকরা বাঁধা দিলে তাদের ওপরও হামলা ও লাঞ্ছিত করে ওই দুই সদস্য। আমি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
অভিযুক্ত ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আমিনুর রহমান শিকদারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বেতন ও পরীক্ষার ফি নিচ্ছিলেন। আমরা ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্য নিষেধ করি। কিন্তু তারা আমাদের কথা উপেক্ষা করে টাকা আদায় করছিলেন। টাকা আদায়ে শিক্ষকদের বাঁধা দিয়েছি। কিন্তু আমরা কোনো শিক্ষকের গায়ে হাত দেয়নি।’
কাশিয়ানী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজা বেগম বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়।’
-লিয়াকত হোসেন লিংকন