আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনাভাইরাসের মহামারির বিস্তার যখন কোনোভাবেই বাধ মানছে না, তখন কোনো কোনো দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমতে দেখে আশা জাগছে। ধারণা করা হচ্ছে, চীনের মতো এ দেশগুলোতেও হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে। যেমন অন্যতম আক্রান্ত তিনটি দেশ ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সে আক্রান্তের হার ও মৃত্যু কয়েক দিন ধরে কমতির দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মৃত্যু না কমলে কমেছে হাসপাতালে ভর্তির হার।
আবার একই সঙ্গে অন্য কোনো দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে দেখলে বেড়ে যাচ্ছে শঙ্কা। যুক্তরাজ্য, বেলজিয়ামের মতো দেশগুলোয় দিনে দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ছে। ভারত, পাকিস্তানেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সিঙ্গাপুর প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিতে পারলেও নগর রাষ্ট্রটিতে এখন রোগী বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেমস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশ সময় গতকাল রাত ১১টা পর্যন্ত ১৮৫টি দেশে করোনার রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ৭৩ জন। মারা গেছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৮ জন। সুস্থ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৩৮ হাজার।
ইউরোপের বাইরে করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমণকেন্দ্র এখন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার। মারা গেছেন ২২ হাজারের বেশি। গত শুক্র ও শনিবার টানা দুই দিন দেশটিতে দৈনিক মৃত্যুর হার ছিল ২ হাজারের ওপরে। তবে রোববার মারা গেছে ১ হাজার ৫২৮ জন। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে। সেখানকার কর্তৃপক্ষ বলেছে, নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে নিউইয়র্কের পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়টি এখনই চোখে পড়বে না। তবে সেখানে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার কমেছে। নিউইয়র্কের মেয়র অ্যান্ড্রু কুমো গতকাল বলেছেন, তাঁর রাজ্য সম্ভবত সচেয়ে খারাপ সময়টা পার করে ফেলেছে।
ইউরোপের দেশ স্পেনে কয়েক দিন ধরেই নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে। গতকাল সোমবার কর্তৃপক্ষ জানায়, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও মারা গেছে ৫১৭ জন, যা গত তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত রোববার মৃত্যু হয় ৬১৯ জনের। দেশটিতে গত ২৬ মার্চ এক দিনে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ২৭১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। সেখান আস্তে আস্তে কমতে কমতে গত রোববার তা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০৪ জনে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোয় পরিস্থিতির উন্নতির ইঙ্গিত। সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে। তবে বাড়ছে অন্য দেশে।
এই অবস্থায় স্পেনের কর্তৃপক্ষ নির্মাণ খাত, কারখানা শ্রমিকসহ যাঁদের ঘরে থেকে কাজ করার সুযোগ নেই, তেমন শ্রমজীবীদের কাজে ফেরার অনুমতি দিয়েছে। তবে তাঁদের মেনে চলতে হবে কড়া বিধিনিষেধ। করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর পর গত ১৪ মার্চ দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে স্পেন সরকার। দেশটিতে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৭ হাজার ৪৮৯ জনের।
সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে ইতালিতেও। দেশটির কর্তৃপক্ষ গত রোববার জানায়, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মারা গেছেন ৪৩১ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯ হাজার ৮৯৯। সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজারের কিছু বেশি।
বিবিসি জানায়, ইউরোপের আরেক দেশ জার্মানির কর্তৃপক্ষ বলেছে, দেশটিতে করোনা সংক্রমিত রোগীর অর্ধেকই সুস্থ হয়ে গেছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৫৪ জন। মারা গেছে ৩ হাজার ২২ জন। এর মধ্যে রোববার মৃত্যু হয়েছে ১৫১ জনের। সুস্থ হয়েছে ৬৪ হাজারের বেশি।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সুস্থতার হারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্পেন। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৩৭ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়েছেন। ইতালিতে সুস্থ হয়েছেন ২২ শতাংশ। ফ্রান্সে ২১ শতাংশ সুস্থ হয়েছেন। রোববার দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৩১৫ জনের।
ইরানেও মৃত্যুর হার কমে আসার পরিপ্রেক্ষিতে চলাচলের ওপর আরোপ করা বিধিনিষেধ শিথিল করতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গতকাল ১১১ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যু হলো সাড়ে ৪ হাজারের বেশি মানুষের। আক্রান্ত ৭৩ হাজারের বেশি। নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসায় রোববার ইরানের সরকার দেশটির বিভিন্ন শহরের মধ্যে চলাচলে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা শিথিল করেছে।
তবে যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা আগের দিন ১০ হাজার ছাড়ানোর পর গতকাল তা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে রোববার মারা গেছে ৭১৭ জন। আক্রান্ত হয়েছে ৮৫ হাজারের বেশি। কিন্তু দেশটিতে সুস্থতার হার খুবই কম।
ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসেও সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। উভয়ই বাড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত ও পাকিস্তানেও। গতকাল ভারতে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা এটাই। এ নিয়ে ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা ৩২৪ জন হলো। আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার। মারা গেছে ৯৫ জন। এশিয়ার আরেক দেশ ইন্দোনেশিয়ায় গতকাল নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩১৬ জন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার ছাড়াল। এ ছাড়া দেশটিতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৯৯ জনের। এর মধ্যে গতকাল মারা গেছে ২৬ জন।
রোগী বাড়ছে সিঙ্গাপুরেও। দেশটিতে রোববার এক দিনে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৩৩ জন। এ নিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে আড়াই হাজার ছাড়াল। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮ জন। সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে ব্রাজিল, তুরস্ক, রাশিয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে। জাপানেও দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।