করোনা নিয়ে ভয় না থাকলেও বস্তিবাসীদের উদ্বেগ এবার যদি আবারও লকডাউন দেয়া হয় এবং তারা কর্মহীন হয়ে যান, তাহলে কি করে সংসার চালোবেন এসব নিয়ে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যেভাবে করোনার প্রকোপ বাড়ছে, এই শ্রেণি যে একেবারেই আক্রান্ত হবে না, তা বলা যায় না। এখনই গুরুত্বের সাথে এই শ্রেণির প্রতি নজর দিতে হবে,তাদেরকে নতুন করে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে, টিকা নেয়ার প্রতি আগ্রহী করতে হবে এবং তাদেরকে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।
মহাখালী সাততলা বস্তির বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বয়ষ্ক নারী মনোয়ারা বেগম। রাস্তায় পিঠা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। দেখা যায় তার দোকানের চতুর্দিক ঘিরে অনেক মানুষ পিঠা খাচ্ছে। এরা কেউ রিক্সা চালক, আবার কেউবা নাইটগার্ড ও গামেন্টসে কাজ করেন। কারো মুখেই মাস্ক নেই। উপস্থিত সবাই ভ্যাকসিন নিয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে সবাই একবাক্যে বলে উঠলেন ‘না’।
পিঠা বিক্রেতা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘টিকার আর কি দরকার। করোনাকে বিশ্বাস করি না, করোনা সত্যি হলে একজন হলেও আমাদের এই বস্তিতে মারা যাইতো, কই কেউ তো মরে নাই’।
তিনি আরও বলেন, ‘করোনাকে আর ডরাই না, মরলে অনেক আগে মরে যাইতাম, একবার জ্বর হয়ে ভালো হয়ে গেছি, এখন এমনিই সুস্থ আছি। তবে চিন্তায় আছি আবার যদি লকডাউন দেয়া হয় তাহলে পিঠার দোকান বন্ধ রাইখা সংসার চালাবো কেমনে’।
পাশেই পানের দোকানদার রহিমা বেগম (৪৫) বলেন, ‘আমাার কোন জ্বর নাই, তাই করোনা পরীক্ষা করাই নাই। ব্রাকের লোকজন অনেক আগে বস্তির কিছু মানুষের ন্যাশনাল আইডি কার্ড নম্বর নিয়ে গেছে, তারপর কোন খবর নাই, আমগোও টিকা নেয়ার আগ্রহ নেই’।
পুরো বস্তি ঘুরে দেখা যায়, কারো মুখেই মাস্ক নেই, চলাফেরাতেও নেই স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়টি। মহাখালীর সাততলা বস্তির অন্তত ২০ জনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন কিনা-সবাই উত্তর দিলেন ‘না’ এবং এই বস্তিতে কেউ টিকা নিয়েছেন বলেও তারা শুনেন নি। দেশে বর্তমান করোনার প্রকোপ বাড়ার বিষয়টি গুরুত্বই দিচ্ছেন না এখানকার বাসিন্দারা।
সাততলা বস্তির পাশেই ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল এবং এই হাসপাতালেই করোনার স্যাম্পল কালেকশনের বুথ। এই হাসপাতালে গত ছয় মাস ধরে ডিউটি পালন করেন আনসার সদস্য আব্দুল্লাহ (৫০)। তিনি বলেন, ‘এখানে যারা টিকা নিতে আসেন তাদের বেশিরভাগই স্বচ্ছল, গাড়ি করে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে আসেন। গরীবদের মধ্যে এখনও তেমন কাউকে দেখি নাি টিকা নিতে আসতে’।
তিনি নিজে ভ্যাকসিন নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দায়িত্বরত আনসার সদস্য আব্দুলাহ বলেন, ‘আমি এখনো টিকা নেইনি, তবে আমাকে বলছে টিকা দিয়ে দিবে’।
এছাড়াও রাজধানীর কল্যাণপুর নয়াবাজার বস্তি ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়। যার যার মতো চলাচল করছেন সবাই। কয়েকজন লুডু খেলছেন আর পাশে দাড়িয়ে খেলা দেখছেন আরও অনেকে, কারো মুখেই মাস্ক নেই, নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই।
গার্মেন্টস কর্মী পারুল বেগম (৪৭) বলেন, ‘আমগো গার্মেন্টসে যারা টিকা নিসে এদের বেশির ভাগই জ্বরে ভুগতেছে, আমি সবার শেষে টিকা নিমু। আর করোনা হইল ধনীগো রোগ, আল্লাহর হুকুমে গরীবকে ধরবে না’।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমরা এই বস্তির কেউ করোনায় আক্রান্ত হই নাই, পরীক্ষাও করানো লাগে নাই, আর কেউ মারাও যায় নাই, কিন্তু এই বস্তির মালিক পয়সাওয়ালা, সেই কিছুদিন আগে করোনায় মারা গেছে’।