,

ঈশ্বরদীতে আগাম শিমে ভরে গেছে ফসলের মাঠ

তোফাজ্জল হোসেন বাবু: দেশের অন্যতম সবজি চাষ অঞ্চল পাবনার ঈশ্বরদীর বাজারে ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের অটো হাইব্রিড শিম। মাচা থেকে এখন কম পরিমাণে শিম উঠছে। তবে দাম বেশ চড়া। প্রতি কেজি পাইকারি দর ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। আর খুরচা প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। এই দামে খুশি শিম চাষীরা। আর দুই সপ্তাহ পর থেকেই পুরো দমে উঠবে এই শিম। তবে সেই সময় দামটা কিছুটা কমে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হবে। আর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ও গত বছরে বিক্রয়ের সরকারি হিসেব অনুসারে এ বছর প্রায় ৩৯/৪০ কোটি টাকার শিম বিক্রয় হবে বলে আশাবাদী কৃষক ও কৃষি অফিস। তবে অনুকূল আবহাওয়া ও চাষের লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হলে এই হার অতিক্রম করবে।

শনিবার মুলাডুলি আড়ৎ, শিমচাষী ও উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

মুলাডুলি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, শত শত হেক্টর জমিতে শোভা পাচ্ছে সবুজ পাতার ওপরে সাদা, বেগুনি রঙয়ের ফলে ভরা শিম ক্ষেত। ফুলের গোড়ায় ছোট, মাঝারী ও বড় সাইজের সবুজ শিম। আর শিমের (চালা) মাচার পাশে দাঁড়িয়ে কৃষক-কৃষাণীরা ফুল, জমানো পাতা ও লতা বাছাইয়ের কাজ করছেন। বিকেলে চলছে রোগ বালাই দমনের জন্য কীটনাশক ওষুধ ছিটানো কাজ। বাঁশ, তারের তৈরি মাচার ওপর দৃষ্টি নন্দনীয় সাদা-বেগুনি রংয়ের ফুল ও সবুজ পাতা এবং কচি শিমের ক্ষেত। তেমনি বালাই নাশক কিটনাশক ওষুধের গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে মুলাডুলির বাতাস।

কৃষক আরিফ খন্দকার (৩৮) জানান, শিম মুলত শীতকালিন সবজি। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস শিমের প্রকৃত মৌসুম। বর্তমানে সার ও কিটনাশক ওষুধের মাধ্যমে আগাম জাতের অটো হাইব্রিড শিম চাষ করা হয়। শিম গত এক থেকে দেড় সপ্তাহ ধরে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। ক্ষেত থেকে কৃষকরা সামান্য কিছু পরিমাণে শিম তুলতে পারছেন। দামও বেশ ভাল যাচ্ছে। বাজারে পুরোপুরিভাবে শিম উঠলে কমে কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা হবে।

তিনি আরো জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও তিনি ৩ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। শিমের গাছের পাতা, ডগা, ফুল ও কচি শিমে এখনো তেমন একটা জাবা পোকা লাগেনি, ডগা পঁচা রোগ ধরেনি, কিংবা পাতা মোড়ানো রোগ দেখা দেয়নি। তারপরও সতর্ক থাকতে সপ্তাহে দুই দিন কিটনাশক ওষুধ ছিটানো হয়। আর বৃষ্টি লেগে থাকলে কিংবা কুয়াশা পড়লে প্রতিদিনই কিটনাষক ঔষধ প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে।

মুলাডুলি আমবাগানের শিমের আড়ৎদার ছানোয়ার হোসেন জানান, বাজারে শিম কয়েক কেজি হিসেবে কৃষকরা আনতে শুরু করেছেন মাত্র। এক থেকে দেড় সপ্তাহ পর থেকে এই বাজার থেকে কয়েক দিন কম পক্ষে ২৫ থেকে ৩০ টি ট্রাক ভরে শিম ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, সিলেট, চট্রগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজারে যাবে। বর্তমানে প্রতি কেজি শিম পাইকারী ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রয় করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানান, এবার শিম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২০০ হেক্টর জমি। আগাম মৌমুমে ইতোমধ্যে ৭০০ হেক্টর জমিতে শিম লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মুলাডুলি ইউনিয়নেই চাষ হয়েছে ৬০০ হেক্টর জমি। এখনো শিম চাষ চলছে।

তিনি আরও জানান, গত বছরে ঈশ্বরদীতে ৯০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছিল। তাতে প্রায় ৪৫ কোটি টাকার শিম বিক্রয় হয়েছিল। এবার জলাবদ্ধতাজনিত কারণে শিম চাষ কিছুটা কম হতে পারে। এই কারণে চলতি মৌসুমে লক্ষ্য কমে ৩৯/৪০ কোটি টাকার শিম বিক্রয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর