জেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুর: বয়সের ভারে নুব্জ। মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই নেই। অন্যের জায়গায় বসবাস করেন। কোন মতে দিন আনে, দিন খায়। আবার কোন কোন দিন না খেয়েও থাকেন। বলছি আলফাডাঙ্গা পৌরসভা বুড়াইচ গ্রামের বাসিন্দা সত্তোর্ধ্ব নি:সন্তান ছালেহা বেগমের কথা।
আর এসমন অসহায় মানুষটির খবর পান গরীবের বন্ধু মানবতার ফেরিওয়ালা সুমন রাফি। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। সুমন রাফির সাহায্য পেয়ে এখন ভাল আছেন সালেহা বেগম। শুধু সালেহা বেগম নয়, আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী উপজেলার হাজারো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সুমন রাফি।
পুরো নাম মো. হেদায়েতুর রাফি সুমন। সবার কাছে পরিচিত সুমন রাফি নামে। বয়স ৩৩ বছর। কারও কাছে তিনি একজন তরুণ সমাজসেবী। কারো কাছে অসহায় মানুষের বন্ধু। আবার অনেকেই তাকে বলেন গরিবের বন্ধু। সমাজের গরিব, অসহায়, দুস্থ, বিপদগ্রস্ত, পঙ্গু, প্রতিবন্ধী থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানোই যেন সুমন রাফির কাজ।
গত কয়েক মাস ধরে আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে সুমন রাফী বিনামূল্যে বøাড গ্রæপ নির্ণয়ের কাজ করে চলছেন ।
কোনো মানুষের বিপদের কথা শুনলে সবার আগে হাজির হন সুমন রাফি। এখন অনেক কিছুই যেন নির্ভর করে তার ওপর। দীর্ঘদিন তিনি মানবতার সেবায় কাজ করছেন। সকল ভালো কাজে অংশ নেওয়াই তার যেন একমাত্র ব্রত। আর এভাবেই তিনি অনেকটা নীরবে নিভৃতে হাজার হাজার ভালো কাজে অংশ নিয়েছেন।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পৌর সদরের ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা ও ঐতিহ্যবাহী জর্জ একাডেমির অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক মো. শওকত হোসেন মিয়া (শওকত মাস্টার) ছেলে সুমন রাফি। মা রাবেয়া বেগম একজন গৃহিণী। বোন শারমিন সুলতানা রিতা সবার বড়। আমেরিকার সিটিজেন। বড় ভাই হায়াতুল রাফি নয়নএকজন স্বর্ণ ব্যাবসায়ী। রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দ্বিতীয় তলায় রোজা জুয়েলার্স নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন তারা দুই ভাই। এখনও সুমন অবিবাহিত। এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়ের তার অর্থ থেকে নিজের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে বাকি সবটুকু মানব কল্যাণে ব্যয় করেন সুমন।
এলাকাবাসী জানান, ছোটবেলা থেকেই সুমন সমাজ ও মানুষের কল্যাণে জড়িত। প্রায় দশ বছর ধরে পুরোপুরিভাবে মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। বোয়ালমারীতে সেবামূলক এমন কোনো কাজ নেই, যেখানে সুমনের অংশগ্রহণ নেই। অসহায় মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া, রোগীকে রক্ত দেওয়া, অসহায় মানুষের মাঝে ঈদ উপহার, মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা, বিভিন্ন স্থানে-প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগানো, গরিবের মাঝে কম্বল ও মাংস বিতরণ, দুস্থ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসা করানো, ঘর নির্মাণ, যুবকদের ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, প্রতিবন্ধী-মানসিক রোগীদের সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই প্রদান, পাখিদের নীড়ের ব্যবস্থা, পশু-পাখিদের খাবার দেওয়া। হারানো শিশুদের উদ্ধারে সহায়তা, পঙ্গুদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে তার অংশগ্রহণের দৃষ্টান্ত রয়েছে। আর এ সবকিছুই তার নিজ অর্থায়নে ও নিজ উদ্যোগে করা।
বোয়ালমারী ব্লাড ব্যাংক, ক্ষুধার্তদের আর্তচিৎকারসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনে রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
এ বিষয়ে সুমন রাফি বলেন, বোয়ালমারী ও আশপাশের এলাকায় অসহায় অবহেলিত মানুষের অনেক কিছুই যেন নির্ভর করে আমার ওপর। যেমন ওষুধ, চাল, শিক্ষা খরচ, কাপড় অর্থাৎ মৌলিক চাহিদাগুলো। যা প্রতিদিন সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি।
তিনি আরও বলেন, আমার লক্ষ্য মানবতার কল্যাণে কাজ করা। কোন দলমত, পদ-পদবীর লোভ আমার নেই। রাজনীতি কিংবা জনপ্রতিনিধি হওয়ারও কোনো ইচ্ছা নেই। আমি মানুষকে দেখানোর জন্যও এসব করি না। ইচ্ছা শক্তি থাকলে আর মন মানসিকতা থাকলে স্ব স্ব স্থান থেকেই অনেক কিছু করা সম্ভব। আমি যা করে থাকি তা আমার নিজের উদ্যোগে ও নিজের অর্থায়নে। তবে আমার পরিবার আমাকে এ কাজে সাহায্য ও প্রেরণা দিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, অনেক সময় এই কাজ করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি এসেছে। তবু পিছু ফিরিনি। যেমন সংখ্যালঘু নির্যাতন ও পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ, অসহায় মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অন্যায় কাজ প্রতিহত করেছি।
-মো. ইকবাল হোসেন