,

সুরমার ভাঙ্গনে হুমকির মুখে নূরপুর গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি

বিডিনিউজ ১০ ডটকম, জামালপুর: দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে সুরমার ভাঙ্গনে সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরো অর্ধশত পরিবার।

সম্প্রতি সরজমিনে নূরপুর গ্রামে গিয়ে সেখানকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, নদীর ভাঙ্গনে প্রতিদিনই ঘরবাড়ি, বাঁশঝাড়, কবরস্থান নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। হুমকির মুখে সত্তর বছরের পুরানো মসজিদসহ অর্ধশত বাড়িঘর।

একসময় বিশাল জনগণের গ্রাম এখন ছোট্ট একটি গ্রামে পরিণত হতে যাচ্ছে। গত পঞ্চাশ বছরে এই গ্রামে বহুলোক পৈতৃক ভিটা হারিয়ে গ্রামছাড়া হয়েছেন। যারা গ্রামে রয়েছেন তাদের প্রতিনিয়তই আতঙ্ক ও ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়।

গ্রামের মুরুব্বী জয়নাল আবেদীন জানান, আমাদের গ্রামের শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছি। আরেকটা বাড়ি কিনে অন্যত্র যাওয়ার সামর্থ্য না থাকায় ভাঙ্গনের কবলেই পড়ে আছি।

একই গ্রামের গোলাম আবদাল (৬৫) জানান, আমরা জন্মের পর থেকে দেখে আসছি নদী ভাঙ্গছে। আমাদের পূর্বের বাড়ি তেরো বছর আগে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে নতুন বাড়ি করি। বর্তমানে এই বাড়িটিও ভাঙ্গনে মুখে। যেকোন মুহূর্তে নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।

মসজিদ কমিটির মোতাওয়াল্লা মোঃ রইছ মিয়া চৌধুরী (৭৫) জানান, প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে গ্রামের মসজিদটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় আমরা নতুন আরেকটি মসজিদ তৈরি করি। কিন্তু এই মসজিদটিও কয়েক মাসের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। অনেকেই ভাঙ্গনের ব্যাপারে আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কেউ ভাঙ্গন রোধে পদক্ষেপ নেননি। আশ্বাস শুধু আশ্বাসেই রয়ে গেল।

একই গ্রামের মোঃ ওমর সানি বলেন, আমার একমাত্র বসতভিটা অর্ধেক ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বাকি অর্ধেকটাতেও কোনরকম বাস করছি। এটাও ভেঙ্গে গেলে আমার সামর্থ নাই আরেকটা বাড়ি তৈরি করার। আমাদের এমপি সাত বছর আগে বলেছিলেন ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নিবেন। কার কেডা, এখনও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা হয়নি।

একই গ্রামের রেজওয়ান আহমদ আলম বলেন, আমাদের এমপি সাহেব ২০১২ সালে আমাদের গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে এলে আমরা ভাঙ্গনের ব্যাপারে বলেছি। তিনি নিজেও ভাঙ্গন দেখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে সাচ্না বাজার ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম বলেন, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে এত বড় ভাঙ্গন রোধে কোন বরাদ্দ না থাকায় গ্রামবাসীর দাবির পক্ষে এমপি সাহেবকে অবহিত করেছি। তিনি বলেছিলেন, ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা হয়নি।’

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘এ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর