,

শরণখোলায় বেড়ীবাঁধ নির্মাণের মেয়াদ শেষ, কাজ অর্ধেক

বাগেরহাট প্রতিনিধি: সুপার সাইক্লোন সিডর আঘাত হানার ১১ বছর পার হচ্ছে আজ। এতগুলো বছর পার হলেও ঘূর্ণিঝড়ের ঝূঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় বলেশ্বর নদ পাড়ের টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা যায়নি। মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে থাকলেও কাজ হয়েছে অর্ধেক। বাকি কাজ কবে শেষ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে সিডর দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে আঘাত হানে। ১৫ থেকে ১৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে শরণখোলায় বলেশ্বর নদের বেড়িবাঁধ ধ্বংস হয়ে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের গ্রামের পর গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। সরকারি হিসেবে শুধু শরণখোলা উপজেলায় ৬৯৬ জনের প্রাণহানির কথা বলা হয়েছে। জেলায় ৩১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ১০০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উত্তর সাউথখালী এলাকায় নদীপাড়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এক্সকাভেটরের সাহায্যে মাটি তুলে বাঁধ উঁচু করা হচ্ছে। বুলডোজারের সাহায্যে আবার ওই মাটি সমান করা হচ্ছে। সিমেন্ট, বালি ও পাথর দিয়ে তৈরি ব্লক রাখা হয়েছে বাঁধের পাশে রাজেশ্বর এলাকায়। চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন কাজ তদারকি করছেন। প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গাবতলা আশার আলো আশ্রয়কেন্দ্রের কাছে গিয়ে দেখা গেল, পুরাতন বাঁধে ভাঙন। এখান থেকে বগী পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার দূরত্বে পাঁচটি পয়েন্টে কয়েক শ মিটার এলাকা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পাইলিং ও বালুর বস্তা ফেলে এই ভাঙন রোধ করা হয়েছে। প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে আরো একটি পয়েন্ট ভাঙার উপক্রম হয়েছে। যেকোনো সময় বাঁধের ওই অংশটি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

শরণখোলা উপজেলার গাবতলা গ্রামের রুহুল চাপড়াসি জানান, টেকসই বাঁধ নির্মাণ কবে নাগাদ শেষ হবে তা তারা বুঝতে পারছে না।

মো. বাহাদুর খান, মো. মাহাবুব হোসেন ও শফিকুল ইসলাম জানান, নদী শাসন না করে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে অনেক স্থানে বাঁধের নিচের অংশ ভেঙে গেছে। আকাশে মেঘ ও নদীতে পানি বাড়লে তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। গুণগত মান ঠিক রেখে দ্রুত বাঁধ নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান তাঁরা।

শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান, ‘বগী এলাকা নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। পুরাতন বাঁধের বিভিন্ন এলাকা একের পর এক ভেঙে নদীতে বিলীন হচ্ছে। ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছে। এদিকে অত্যন্ত ধীরগতিতে বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে।’

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস বলেন, ‘ভাঙন ঠেকাতে হলে সেখানে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করে রিং বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন।’

বাঁধ নির্মাণের তদারকি কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলী শ্যামল কুমার দত্ত জানান, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় নদীপাড়ে ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন জানিয়েছেন ঠিকাদার।

উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প ফেইজ ১ (সিইআইপি ১) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৬৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্যাকেজে বাগেরহাট সদর, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলায় টেকসই বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। বাঁধের উচ্চতা হবে ৫ থেকে সাড়ে ৬ মিটার এবং ওপরের অংশে প্রশস্ত থাকবে সাড়ে ৪ মিটার। সিমেন্ট ও বালির সঙ্গে পাথর দিয়ে এমনভাবে ব্লক নির্মাণ করে বাঁধে বসানো হবে যাতে ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এর স্থায়িত্ব হবে অন্তত ৫০ বছর। ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস এই বাঁধ মোকাবেলা করতে পারবে। বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত জলকপাট নির্মাণ ও মেরামত, নদীভাঙন রোধ এবং ছোট ছোট নদী-খাল খনন করা হবে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। দি ফাস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো অফ হ্যানান ওয়াটার কনসালভেন্সি নামে চায়নার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই বাঁধ নির্মাণকাজ করছে। আর বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘জমির দখল হস্তান্তর বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঁধের কাজ শুরু করে। এখনো জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়ার কাজ চলছে।’

এই বিভাগের আরও খবর