,

কুড়িগ্রামে ‘এডিপির প্রকল্পে’ ব্যাপক দুর্নীতি

জেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম: চিলমারী উপজেলায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্পের প্রায় এক কোটি ৪১ লাখ টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

কোনো কাজ না করলেও পুরো বিল উত্তোলনের তুঘলকি ঘটনা এখন তোলপাড় চিলমারীতে। উন্নয়নের নামে বরাদ্দকৃত টাকা নয়ছয় হওয়ায় উন্নয়ন বঞ্চিত দারিদ্র্যপীড়িত এ জনপদের মানুষ। অনিয়ম ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই।

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ঢালাওভাবে সব অভিযোগ সঠিক নয়। সরকারি সব বিধিবিধান মেনেই এডিপির প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিশেষ বরাদ্দের ২০ লাখ টাকার কাজের তিনটি প্রকল্পের কাজ শেষ না করে ৬ লাখ টাকার বিল উত্তোলনের ঘটনা নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে ওই টাকা ফেরত দিতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও কিছু কাজ অসম্পন্ন রয়েছে কিন্তু জুন ক্লোজিং এ বিল উত্তোলিত হলেও ঠিকাদারের কাছ থেকে অসম্পন্ন কাজের টাকার চেক প্রকৌশল বিভাগে জমা আছে। কাজ শেষ হলে পুরো টাকা পরিশোধ করা হবে। কাজেই অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। আর এডিপি বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আর সদস্য সচিব উপজেলা প্রকৌশলী। আমি সদস্যমাত্র। কাজেই এর দায়ভার আমার ওপর বর্তায় না।

জানা যায়, এ উপজেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরের উন্নয়ন সহায়তা খাতের জন্য ৩৩টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় এক কোটি ৪১ লাখ ৭৪ হাজার ১০ টাকা। এর মধ্যে দরপত্রের মাধ্যমে ৭টি প্রকল্পে ৬০ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৭ টাকা। প্রকল্প চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ১৯টি প্রকল্পে ৩৪ লাখ টাকা এবং কোটেশনের মাধ্যমে ৭টি প্রকল্পে ২৭ লাখ ৬ হাজার ২০১ টাকা।এই প্রকল্পের তালিকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পাইলট বিশ্রামাগার চিলমারী কার্যালয়ের উত্তর-দক্ষিণ পাশে প্যালাসাইডিং কাজের জন্য চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ বিআইডব্লিউটিএর এই ভবনটি বাউন্ডারি দেওয়াল নির্মাণ সম্পন্ন করে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু কোনো ধরনের প্যালাসাইডিং কাজ না করেও এডিপি প্রকল্পে ব্যয় দেখানো হয়েছে। একই চিত্র চিলমারী নৌ বন্দরের যাত্রী ছাউনি নির্মাণে মাটি ভরাটের জন্য দু’লাখ টাকারও। প্রায় দু’বছর আগে নির্মিত যাত্রী ছাউনিটি নির্মাণের পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এই যাত্রী ছাউনিতে মাটি ভরাট না করেই দু’লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। উপজেলার রমনা ইউনিয়নের আমিনুলের দোকান হতে ভুট্টুর বাড়ি যাওয়ার রাস্তায় সিসি ও প্যালাসাইডিং এর জন্য তিন লাখ ১৯ হাজার ৭৩১ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও আজো সেই কাজ বাস্তবায়ন হয়নি।

চিলমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশিক ইকবাল কাজে অনিয়ম স্বীকার করে বলেন, প্রায় ৯ লাখ টাকার কাজের ৩০ ভাগও হয়নি।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান আজাদ বলেন, কাজ করেই বিল নিয়েছি। প্রায় ৯ লাখ টাকার কাজ ঠিকাদারের কাছ থেকে কিনেছি ২ লাখ টাকায়। এটাকে অনিয়ম বলার সুযোগ নেই।

থানাহাট পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক  শেফাউন নাহার বলেন, এডিপির প্রকল্প থেকে থানাহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের গেট নির্মাণের জন্য বরাদ্দের ২ লাখ টাকা তিনি এখন পর্যন্ত পাননি। সেই টাকা ইউএনওর কার্যালয়ে আছে। আর এক লাখ টাকায় শহীদ মিনারে টাইলস করার কাজও হয়নি। অর্থ বছর শেষ হলেও কাজ না করেই পুরো অর্থ লোপাট করা হয়েছে।

ঠিকাদার রব্বানী বলেন, কাজ-কলমে ঠিকাদার আমি থাকলেও বাস্তবে কাজ আমি করিনি। কাজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে। কাজেই কাজ হয়েছে কিনা আমি বলতে পারব না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পাইলট মাহাবুব বলেন, বিশ্রামাগার চিলমারী কার্যালয়ের উত্তর-দক্ষিণ পাশে প্যালাসাইডিং এবং যাত্রী ছাউনির পাশে ভাটি ভরাটের কাজ হয়নি। বিআইডব্লিউটিএ ভবনের বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ, ফুলের বাগানের র‌্যালিং, ঘেরের পর্দা লাগানো এবং বাথরুমের দরজা লাগানো ও রঙের কাজ হয়েছে। জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এ কে এম সামিউল হক নান্টু বলেন, ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির কারণে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকারের দেওয়া বরাদ্দ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় দারিদ্র্যপীড়িত এ জেলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন হচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর