গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের গোটা বিশ্ব আজ অসহায়। প্রতিদিন বিশ্বে হাজার হাজার লোক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুবরণ করছে। বিশ্ববাসী এখনও খুঁজে পায়নি আশার আলো। করোনা ভাইরাসের এখনো পর্যন্ত কোন প্রতিষেধক উদ্ভাবন হয়নি।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, জনসমাগম রোধ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে কিছুটা হলেও সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। তাই দেশের মানুষকে গৃহবন্দি করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন সরকার।
মানুষকে ঘরে ফেরাতে, যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল রোধে দিনরাত পুলিশ প্রশাসনকে সাথে নিয়ে মাঠে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (১৯ এপ্রিল) পুলিশ বাহিনী সাথে নিয়ে বের হন জেলা ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সালাউদ্দিন দীপু। উদ্দেশ্য, বিনা প্রয়োজনে কেউ ঘর থেকে বের না হয় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ব্যতিত অন্য কোন দোকানপাট খোলা না থাকে তা তদারকি করা।
ঠিক বেলা পৌনে ১টা। গোপালগঞ্জের শহরের বড় বাজার মনিটরিং প্রায় শেষ। এমন সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সালাউদ্দিন দীপু দেখতে পান বাজারের শেষ প্রান্তে একটি মেয়ে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করছে। পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সত্তরোর্ধ বয়সী এক লোক। হাতে একটা কাগজ।
ম্যাজিষ্ট্রেট দীপু তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘চাচা আপনি এখানে কেন এসেছেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘কিছু না বাবা, এই কাগজটা লিখতি হবে। কেউরে পাইনা পাশের ছোট্ট চা’র দোহানড্যা আমার। ওর মধ্যেই থাহি, করুনার জন্নি দোহান বন্ধ। ওই দোহানেরতে যা পাতাম তাই দিয়ে চলতি পারতাম। এহন বন্ধো। ঘরে কিছু নেই খাওয়ার। সকালের থেকে কিছু খাই নেই। পেটে ক্ষুধা।’
কিছৃুক্ষণ পর ওই বয়স্ক লোকটি ম্যাজিষ্ট্রেটকে বললেন, ‘বাবা তোমরাতো সারা দিন করুনার জন্নি কাজ করছো তোমাগেতে কিছু খায়া হয় নাই। তোমরা দাঁড়াও।’ এই বলে তার ছোট দোকানে ঢুকে হাতে করে ৭-৮টি কলা নিয়ে আসলেন। বললেন, ‘বাবারা তোমাগে মুখ শুকয় গ্যাছে কেলাখাও।’ এই বলে সবার হাতে একটা করে কলা গুজে দিলেন।
এ সময় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের সাথে দায়িত্বে থাকা দু’জন পুলিশ সদস্যের চোখ বেঁয়ে পানি পড়ছিল। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটও নিজেকে সংবরণ করতে পারছিলেন না। তাঁর চোখেও পানি চলে আসল।’
ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সালাউদ্দিন দীপু বলেন, ‘তখন আমার মনে হয়েছিল, ওই চাচাকে বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদি। আজ মনে হয়েছে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষটির কাছ থেকে জীবনের সবচেয়ে বড় উপহারটা পেলাম। একটা কলা, যার মূল্য কোটি টাকা দিয়েও শোধ করা যাবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক লোকটিকে সামান্য কিছু খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেই। তবে এ দিয়ে তিনি বেশি দিন চলতে পারবেন না।’
বয়স্ক লোক সাংবাদিকদের বললেন, ‘আমি না খাইয়া আছি। তাই না খায়ার কষ্ট আমি বুজি। ওই মানুষ কয়ড্যারে দ্যাহি মুখ শুকাই গ্যাছে। তাই আমার ঘরে ক্যালা ছাড়া কিছু ছেলো না। থাকলি দিতাম।’