কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে উচ্চ মুনাফায় ঋণ নিয়ে ফসল আবাদ করে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এ অঞ্চলের বানভাসি কৃষকরা। চলতি মৌসুমে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ায় তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।
কাঙ্খিত ফসল ঘরে তুলতে না পেরে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তাই সরকারিভাবে প্রণোদনা ও ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।
কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রাম জেলায় চলতি বছর অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। এতে ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬০টি ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রাম পানিবন্দী হয়। টানা ২০ দিন ধরে স্থায়ী বন্যায় মাঠে রোপণকৃত ৩৩ হাজার ৪৪২ হেক্টর সবজির মধ্যে ১৯ হাজার ৬৩৮ হেক্টর ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গেছে। এতে টাকায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৬ কোটি ৩৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৪ জন কৃষক। এর মধ্যে ৫৩ কোটি টাকার সবজি, ২১ কোটি টাকার মসলা জাতীয় ফসল, ৫৭ কোটি টাকার আউশ ও ১৫ কোটি টাকার বীজতলা রয়েছে। ঋণ নিয়ে সবজি চাষ করে ফসল নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছে অনেক কৃষক।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর এলাকার সবজি চাষি কেরামত আলী (৬৫) জানান, হঠাৎ করে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তার পটল খেত তলিয়ে গেছে। এতে দুই বিঘা জমির সবজি খেত নষ্ট হয়ে গেছে। একই অবস্থা সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের মালভাঙ্গা, সিতাইঝাড়, মাজাগ্রাম এলাকার কৃষকদেরও। এখানে সবজি চাষ করেই লোকজন জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের সবার সবজিখেত পানির নিচে তলিয়ে আছে।
বন্যায় চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার শতভাগ বীজতলাসহ অন্যান্য উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে চারার অভাবে আমন চাষ করতে পারছে না অনেক কৃষক। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে চড়া দামে চারা সংগ্রহ করলেও ভরা মৌসুমে অর্থাভাবে হাত গুটিয়ে বসে আছে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর গ্রামের কৃষক কয়সার আলী (৭০) জানান, এক একর জমিতে ভাদাই ধান আবাদ করেছিলেন বন্যায় তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে।
একই অবস্থা বর্গা চাষি মোজ্জাম্মেল হকের। তিনি জানান, ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১০ বিঘা বর্গা নিয়ে ভাদাই ধান আবাদ করেছিলেন কিন্তু বন্যায় তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। তবে কৃষকরা চারা সংকটে আমন আবাদ করতে অপারগ হওয়ায় এবং অনেক জমি পতিত থাকার আশঙ্কা দেখা দিলেও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আপাতত কোনো সহায়তার পাবার আশা নেই।
ঋণ নিয়ে সবজি চাষ করেছে বিভিন্ন এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা। সবজি বিক্রি করে মাসে মাসে কিস্তি শোধ করতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু বন্যায় সব ফসল নষ্ট হওয়ায় সংসার চালানোসহ কিস্তির টাকা শোধ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বন্যায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রবি মৌসুমে প্রণোদনা দেয়ার কথা ভাবছে সরকার।