,

থমকে আছে দুই স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা মামলা

মাদারীপুর প্রতিনিধি: মাদারীপুরে থমকে আছে চাঞ্চল্যকর ৮ম শ্রেণির দুই স্কুলছাত্রী সুমাইয়া ও হ্যাপী ধর্ষণ ও হত্যা মামলা। মামলা দায়ের করার পর থেকে প্রভাবশালীরা মামলার বাদী নিহত সুমাইয়া আক্তারের পিতা বিল্লাল শিকদারের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে।

সন্ত্রাসীদের ক্রমাগত হুমকির মুখে তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। বিল্লাল শিকদার পরিবার-পরিজন নিয়ে গত প্রায় দু‘বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয় মামলার সকল আসামি জামিনে মুক্তি পায় এবং এদের মধ্যে ৪ আসামি পালিয়ে বিদেশে চলে যায়।

এদিকে পালিয়ে থাকা মামলার বাদী বিল্লাল শিকদার জীবনের নিরাপত্তার কারণে পুলিশ প্রহরায় হাজিরা দিয়ে আসছেন। তিনি সোমবার দুপুরে পালিয়ে এসে এসব অভিযোগ উত্থাপন করে স্থানীয় এম এম হাফিজ মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরিতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত সুমাইয়ার পিতা বিল্লাল শিকদার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘বিগত ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট সদর উপজেলার মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির দুই ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার ও হ্যাপী আক্তারকে ধর্ষণ শেষে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়।

পরদিন ১৪ আগস্ট তিনি মাদারীপুর থানায় সুমাইয়া ও হ্যাপীকে ধর্ষণ শেষে হত্যার বিচার চেয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ৭/৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলো- রানা নার্গাসী, মেহেদী, শিপন শিকদার, রফিকুল দর্জী, উজ্জল শিকদার, রকিব শিকদার, সাজন বেপারীসহ অজ্ঞাতরা। পুলিশ অজ্ঞাতসহ বেশ ক‘জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। কিছুদিন পর এরা সবাই জামিনে মুক্তি পায়। মুক্তি পাওয়ার পর উজ্জল, নাজমুল, সজিব ও আল-আমিন পালিয়ে বিদেশে চলে যায়।

মামলাটির তদন্ত অফিসার বদল হয়েছে একাধিকবার। বারবার নারাজীর পরে তদন্তের ভার যায় সিআইডির হাতে। লাশের প্রথম ময়না তদন্ত দাখিলের পরে বাদী নারাজী দেয়। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে কবর থেকে তাদের লাশ উত্তোলন করে পুনরায় ময়না তদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এক বছর হলেও দ্বিতীয় ময়না তদন্তের রিপোর্ট আজও আলোর মুখ দেখেনি।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘চলতি বছর ৩০ জানুয়ারি ৮ জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ এনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি পুলিশ। এ সময় মামলার ৫ম তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন আসামি শিপন শিকদার, সালমা বেগম ও রফিকুল ইসলাম সজিবকে অব্যাহতি দিয়ে মেহেদী, আল-আমিন, নাজমুল, উজ্জ্বল, রকিবসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।’

বিল্লাল শিকদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা আর কতকাল ন্যায় বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরবো? আমরা কি আদৌ বিচার পাবো? নাকি প্রভাবশালীদের হুমকির মুখে সারা জীবনই কি পালিয়ে থাকতে হবে? অপরাধীরা কি বার বার পার পেয়ে যাবে? আমি গত হাজিরার দিন পুলিশ পাহারায় আদালতে হাজিরা দিয়ে আসি। মঙ্গলবার মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ আমি সেখানেও পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে আদালতে যাবো। ঢাকা থেকে পালিয়ে এসে সংবাদ সম্মেলনে এসেছি।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) বদলুর আলম মোল্লা বলেন, মামলাটি এখন সিআইডিতে রয়েছে, তাই আমরা বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না। তবে বাদীর পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় থাকলে আমরা তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবো। তাদেরকে আইনগতভাবে সকল সহযোগিতা প্রদান করবো।

এই বিভাগের আরও খবর