জেলা প্রতিনিধি, ভোলা: প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে ‘হামুন’। ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় ‘হামুনের’ সম্ভাব্য আঘাতকে সামনে রেখে চরফ্যাশনের দূরবর্তী চরাঞ্চলগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আজ সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর দিনভর আকাশ ছিল গুমোট-মেঘাচ্ছন্ন। ভোলার চরফ্যাশন উপকূলজুড়ে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ আতঙ্কে নিম্নাঞ্চল এলাকার মানুষদের দ্রুত সাইক্লোন সেন্টারে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের তৎপরতা চলছে।
মঙ্গলবার সকালে ৭ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত ঘোষণার পর চরফ্যাশন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ১৬৫টি ইউনিটে ২ হাজার ৪৭৫ জন স্বেচ্ছাসেবক উপকূল এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য কাজ করছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সভায় কন্ট্রোল রুম খুলে সব এলাকার চেয়ারম্যানদের দুর্যোগ মোকাবেলায় উপকূলে মহাবিপদ সংকেত সতর্কবার্তা ও লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবদীন আখন অফিস আদেশ জারি করেন।
উপজেলার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) সহকারী পরিচালক মেজবাউল হক জানান, চরফ্যাশন উপজেলায় ১১১টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও ২৩টি মাটির কেল্লা রয়েছে। চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরের মাঝখানে ভোলা উপকূলীয় জেলা। যে কোনো মুহূর্তে পায়রা ও চট্টগ্রামে ‘হামুন’ আঘাত হানলে ভোলার উপকূলসমূহে ব্যাপকভাবে ঘূর্ণিঝড় অগ্রসরের আশঙ্কা। উপজেলা রেডক্রিসেন্টের সামনে মহাবিপদ সংকেত পতাকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চর কুকরিমুকরি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন জানান, সন্ধ্যার পর কুকরিমুকরি ও ঢালচর পাতিলা এলাকায় ৩-৪ ফুট জলোচ্ছ্বাসের পানিতে এলাকা তলিয়ে গেছে। ‘হামুনের’ আঘাতের সতর্ক বার্তা মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বলা হচ্ছে।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক জানান, উপকূল চরফ্যাশনের নিম্নাঞ্চল চরসমূহে কিছু কিছু জাগায় জলোচ্ছ্বাসের পানি উপকূলে উঠে গেছে। জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে নিতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুরজাজামান জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এগিয়ে আসছে। জেলায় ও সব উপজেলায় আমরা প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপি, ফায়ার ব্রিগেড, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, পুলিশ, কোস্টগার্ড, ত্রাণ শাখাকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা নৌ পুলিশের ইনচার্জ আখতার হোসেন বলেন, নদী এবং উপকূলের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আমরা প্রচারণা শুরু করেছি, মানুষ সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চরফ্যাশন-ঢাকা ও ঘোষেরহাট-ঢাকা, বাবুরহাট-ঢাকাসহ সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে।
সংস্থাটির সহকারী পরিচালক সাহাবুদ্দিন বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।