নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে গত কয়েকদিনের তীব্র কুয়াশা কিছুটা কমে আসলেও কমেনি শীতল বাতাস। সেই সঙ্গে সূর্যের দেখা না মেলায় কনকনে ঠাণ্ডায় জবুথবু শহরবাসী। শীতে সবথেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষেরা।
দিনে কিছুটা উষ্ণতা বাড়লেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে জেকে বসেছে শীত। শীতের তীব্রতায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসেছে পুরানো গরম কাপড়ের অস্থায়ী দোকান। কোথাও আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন সাধারণ নগরবাসী।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, আগামী দু-এক দিন শীতের তীব্রতা এমনই থাকতে পারে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেও দেশে তীব্র শীতের অনুভূতি বেশি হওয়ার মূলত তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন তারা।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, প্রথমত, দেশে দিন-রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম থাকছে। দ্বিতীয়ত, সাধারণত শীতকালে বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি থাকলে শীতল বাতাস বাধা পায়। চার দিন ধরে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমেছে। ফলে উত্তরাঞ্চল দিয়ে শুষ্ক ও শীতল বাতাসের প্রবাহ বেড়েছে। তৃতীয়ত, দেশের নদ-নদী ও গঙ্গা অববাহিকা দিয়ে আসা কুয়াশা মিলেমিশে একটি আস্তর তৈরি করেছে। যে কারণে সূর্যের আলো ভূমিতে প্রবেশ করতে পারছে না। এতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা খুব বেশি না কমলেও শীতের অনুভূতি বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, রাজধানীতে শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত চার দিনে প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে। আগামী দু-এক দিন এই শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। দুই দিনের মধ্যে কুয়াশা কিছুটা কাটতে শুরু করবে। এতে রোদ বেড়ে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। কমতে থাকবে শীতও।
শুক্রবার দুপুরে দেশের কয়েকটি জেলায় কয়েক ঘণ্টার জন্য রোদের দেখা পাওয়া গেছে। তাই তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। তবে তাতেও শীতের দাপটে খুব একটা হেরফের হয়নি। মূলত দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসায় শীতের অনুভূতি বেশি মনে হচ্ছে। চার দিন ধরে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় এক থেকে দুই ঘণ্টার বেশি রোদের আলো আসেনি। ফলে দিন-রাত প্রায় সমান শীতের অনুভূতি পাওয়া যাচ্ছে।
আবহাওয়াবিদেরা বলেন, সাধারণত শীতের এই সময়ে রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। দিনে চার থেকে ছয় ঘণ্টা রোদ থাকায় ভূখণ্ড কিছুটা উত্তপ্ত হয়। এতে দিনের একটি বড় সময় শীতের অনুভূতি কম থাকে। কিন্তু তিন দিন ধরে ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় রাতের সঙ্গে দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসে। গতকাল রাজধানীর দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ছিল ৮ ডিগ্রি, আর টাঙ্গাইলে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও কম।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দেশের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও যশোরে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা ছিল। অর্থাৎ ওই জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমপক্ষে টানা দুই দিন ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে বলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, ৪ থেকে ৬ হলে তা তীব্র এবং ৪ এর নিচে হলে তাকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। এই সংজ্ঞা মূলত সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ভিত্তিতে করা। তবে দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ মৃদু থাকলেও দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে এলে সেখানে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। চার দিন ধরে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও শীতের অনুভূতি তীব্র হয়ে উঠেছে।