,

২২ বছরেও হাঁটাচলা করতে পারেন না রিপা

জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী: রিপা আক্তারের বয়স ২২ বছর। কিন্তু তাকে দেখে মনে হয় ৬-৭ বছরের শিশু। একা চলতে পারেন না। বসতেও পারেন না। থাকতে হয় বাবা-মায়ের কোলে।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সামসু মাস্টার পাড়ার শরিফুল শেখ ও রুবি বেগম দম্পতির সন্তান রিপা। শরিফুল শেখ চা বিক্রেতা। নিজের জায়গা-জমি না থাকায় অন্যের জমিতে ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করেন। রিপা ছাড়াও শরিফুল-রুবির দুই ছেলে রয়েছে। তারা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠেছে।

চা বিক্রি করে দৈনিক ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা আয় করেন শরিফুল। সংসার খরচ চালিয়ে অসুস্থ মেয়েকে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সুচিকিৎসা না পাওয়ায় দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে রিপার। মেয়ের চিকিৎসা করাতে মানুষের সহযোগিতা চান বাবা-মা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিত্তবানদের কাছেও গিয়েছেন। কিন্তু কোথাও কোনও সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ তাদের।

শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার যা কিছু ছিল মেয়ের চিকিৎসায় ব্যয় হয়ে গেছে। এখন নিজস্ব কোনও জায়গা-জমি নেই। অন্যের জমিতে একটি ছাপড়া ঘর তুলে কোনোরকম অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে থাকতে হচ্ছে।নির্বাচনের সময় অনেকে আশ্বাস দিয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর কেউ যোগাযোগ করেননি। তাদের কাছে গিয়েও সহযোগিতা পাইনি।’

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা তোফাজ্জেল হোসেন তপু জানান, সুচিকিৎসার অভাবে রিপা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পেলে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব হতো।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ‘রিপা আক্তার নামে কেউ আমার কাছে সহযোগিতার জন্য কখনও আসেননি। এ বিষয়ে আজই খোঁজ-খবর নেবো।’

গোয়ালন্দ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের ফিল্ড অফিসার মুহাম্মদ সেলিম সরদার জানান, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১ হাজার ৬৮৬ জন সুবিধাভোগী রয়েছেন। জনপ্রতি মাসে ৮৫০ টাকা করে সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে রিপা কেন সুবিধা পাচ্ছেন না সেটা তিনি বলতে পারেনি।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রুহুল আমীন বলেন, ‘আমি দুই মাস আগে এখানে যোগদান করেছি। আমার কাছে রিপা আক্তার নামে কেউ ভাতা কার্ডের জন্য আসেননি। এলে তিনি যদি ভাতা কার্ড বা সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য হন, তাহলে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে।’

রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বলেন, ‘সাধারণত হরমোনের অভাবে অনেক সময় শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে না। যে কারণে রিপার বয়স ২২ পেরিয়ে গেলেও ৬-৭ বছরের শিশু মনে হচ্ছে। তবে তাকে আরও অনেক আগে সুচিকিৎসা করানো প্রয়োজন ছিল। বয়স বেশি হলে শরীরের বৃদ্ধি ঘটে না। সুতরাং রিপার শরীর বৃদ্ধির সম্ভাবনা এখন অনেক কম।’

এই বিভাগের আরও খবর