,

১৭ দিন ধরে নিখোঁজ নারী, স্বামী গ্রেফতার

খুলনা প্রতিনিধি: খুলনার দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া থেকে নিখোঁজ রহিমা খাতুনের (৫৫) সন্ধান ১৭ দিনেও মেলেনি। এ ঘটনায় তার স্বামী হেলাল হাওলাদারসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, গৃহবধূ রহিমা খাতুন নিখোঁজের ঘটনায় তার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসা শেষে সন্তানদের করা মামলায় তাকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। হেলালকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে।

গৃহবধূ রহিমা খাতুন নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশ ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে কোনও তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি।

ওসি বলেন, ‘পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা এ ঘটনার তদন্ত করছে। তবে এখনও উল্লেখযোগ্য তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। রহিমা খাতুনের মোবাইল ফোনটিও শনাক্ত করা যায়নি। তবে ঘটনার দিন রাত ১০টার পর যোগীপোল এলাকায় তার মোবাইল সচল ছিল। এরপর বন্ধ হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতিপূর্বে গ্রেফতার পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত আবেদন নামঞ্জুর করেন। বাদী মামলার এজাহারে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক চার জনের নাম উল্লেখ করেন। এ পর্যন্ত ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়াও রয়েছেন। অন্য চার জন হলেন-দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল ও হেলাল শরীফ।

এ বিষয়ে র‌্যাব-৬ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোসতাক আহমেদ বলেন, ‘রহিমা খাতুনের নিখোঁজের ঘটনাটি জানার পর র‌্যাব ছায়া তদন্ত চালিয়ে আসছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও ধরনের ক্লু উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।’

এদিকে রহিমা খাতুনের মেয়ে মরিয়ম মান্নান আজ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আজকে ১৭ দিন। আমি জানি না আমার মা কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কীভাবে আছেন। প্রশাসন বলছে, তারা কাজ করছেন। আজকে ১৭ দিন যাবৎ তারা দেখছেন। কিন্তু আমার মা কোথায়? আমার মাকে কেন খুঁজে পাচ্ছি নাহ! কোথায় আমার মা! এই ১৭টা দিন আমার কীভাবে কাটছে তা আমি কাকে বোঝাবো! কী পরিমাণ অসহায় লাগছে তা আমি কীভাবে প্রকাশ করবো! মাকে ছাড়া প্রতিটি নিঃশ্বাস কীভাবে নিচ্ছি তা তো কেবল আমরা ভাইবোনেরা জানি! খেতে গেলে মনে হয় আমার মা কী খাচ্ছে, ঘুমাতে গেলে মনে হয় আমার মায়ের সাথে কী ঘটছে! দুই চোখের পাতা একসাথে করতে পারি না! পাগলের মতো ছুটতেছি! ক্লান্ত হয়ে পড়ছি, আবার ছুটছি! মা হয়তো সময় গুনছে তার সন্তানেরা তাকে খুঁজে বের করবে। মায়ের ছলছল মুখ শুধু চোখের সামনে ভাসে!’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার জায়গায় একটি বার নিজেকে ভাবুন! চিন্তা করুন আমার কথা! আমি আমার মাকে খুঁজে পেতে আপনাদের সকলের সহোযোগিতা চাই। দয়া করে আপনারা আমার এবং আমার পরিবারের পাশে থাকুন। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টায় আমি আমার মায়ের জন্য শাহবাগে দাঁড়াবো। আমার বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং এই দেশবাসীকে আমার এবং আমার পরিবারের পাশে চাই। আমার মাকে খুজে পেতে আমাকে সহোযোগিতা করুন।’

উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন রহিমা খাতুন। ঘণ্টা পার হলেও তিনি বাসায় ফিরে আসেননি। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা নিচে নেমে ব্যবহৃত স্যান্ডেল, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর