,

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

জেলা প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ: :সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বেশির ভাগ বাড়ি-ঘর থেকে পানি নেমে গেছে। তবে বাড়ির আশপাশ, সড়কসহ কর্মক্ষেত্রে পানি থাকায় বেকায়দায় পড়েছেন হতদরিদ্ররা। সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় কোথাও কোথাও বিশৃঙ্খলাও হয়েছে। তবে ইউপি সদস্যরা বলছেন, ত্রাণ কম থাকায় লুকিয়ে মানুষকে সহায়তা দেওয়া লাগছে। এভাবে ত্রাণ বিতরণ করা কঠিন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ সদরের সাত হাজার ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৭ হাজার মানুষ। উপজেলাগুলোর ২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৫০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। সোমবার পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বন্যার্তরা বাড়ি ফিরেছেন।

বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার মধ্যে ছাতকে ৩০, দোয়ারাবাজারে ৩০ এবং সুনামগঞ্জ সদরে ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে জেলা ত্রাণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ছাতক ও দোয়ারাবাজারে ২৫ টন করে এবং সুনামগঞ্জ সদরে ১৫ টন চাল পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মধ্যে ১৯ মে থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু হলেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এখনো ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

দোয়ারাবাজারের নৈনগাঁও আশ্রয়কেন্দ্রের ১৫ পরিবারের কেউই ত্রাণ পাননি বলে দাবি করেছেন। এই আশ্রয়কেন্দ্রের জমির আলী, আরফান আলী, ইব্রাহিম মিয়া, ছম্বুর আলী, মোমিন উদ্দিন, জাহের আলী, নেয়ারুনন্নেছা ও করম আলীর ঘরে হাঁটুসমান পানি ছিল। ফলে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তারা কর্মহীন।

আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা দিনমজুর আমির আলী বলেন, ‘ঘরে দরজায় পানি আছিল, বারইয়া যাওয়ার জাগা নাই। ৬-৭ দিন ধইরা কাজ নাই, বউ-বাচ্চা লইয়া বিপদে আছি। এখনো কেউ আইয়া কোনো সাহায্য দিছইন না।’

পাশে দাঁড়ানো আরফান আলী ও দিলারা বেগম জানান, তিন ছেলে পাথরের মিলে কাজ করত। বন্যার পানিতে ক্রাসার মিল ডুবে যাওয়ায় ওখানে কাজ নেই। ছেলেরা বেকার, কীভাবে ১০ জনের সংসার চলবে তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল গাফ্ফার বলেন, আমার ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ পরিবারের তালিকা দিয়েছি। ৩০ জনের জন্য ১০ কেজি করে চাল, ২০ প্যাকেট শুকনো খাবার পেয়েছি। এই সহায়তা আমি কাকে দেব, আর কাকে বাদ দেব? এই অবস্থায় লুকিয়ে লুকিয়ে ত্রাণ দিতে হচ্ছে।

এই ইউনিয়নের পশ্চিম মাছিমপুরের পূর্বাংশের আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা সুকেশ দাশ, রতীশ দাশ ও ভূষণ দাশের পরিবারও ত্রাণ সহায়তা পায়নি বলে দাবি করেছেন।

দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ বলেন, আমার ইউনিয়নে কমপক্ষে দুই হাজার মানুষকে এই মুহূর্তে খাদ্যসহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। আমরা পেয়েছি আট টন চাল, দিতে পেরেছি ৮০০ মানুষকে। চারশর মতো শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ হয়েছে। তবে নগদ কোনো টাকা পাইনি।

জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকার দুর্গত মানুষের পাশে আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে সাড়ে ১৪ কেজি ওজনের আরও পাঁচ হাজার বস্তার খাদ্যসহায়তা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নগদ ১০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর