,

সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়েই শিল্পাঞ্চলে ফিরছে শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: লকডাউনে বন্ধ সব ধরণের পরিবহন। কিন্তু আগামীকাল থেকেই খুলতে যাচ্ছে সব পোশাক কারখানা। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা শ্রমিকরা দলবেঁধে প্রবেশ করছে সাভার শিল্পাঞ্চলে। বেশিরভাগ উত্তরবঙ্গ থেকে আসা শ্রমিকরা কেউ এসেছেন মাইক্রোবাস, ট্রাক, সিএনজি কেউবা আবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে অটোরিকশাতেও। সীমাহীন কষ্ট আর অতিরিক্ত টাকা অপচয় হলেও এসব দেখার কেউ নেই বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।

শনিবার (৩১ জুলাই) ভোর থেকেই আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় শত শত শ্রমিককে ঢাকামুখী হতে দেখা গেছে। তবে রাতভর যাত্রাপথে নানান বিড়ম্বনার পর এখানে পৌঁছেও গণপরিবহন না পাওয়ায় শ্রমিকদের দুর্ভোগ যেন চরমে উঠেছে। ব্যাগের বোঝা ও শিশুদের নিয়ে হেঁটেই যেতে হয়েছে তাদের।

রাজশাহী থেকে শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে রাতভর চরম দুর্ভোগ নিয়ে ভোরে বাইপাইল পৌঁছেছেন হাবিবুল্লাহ মন্ডল। পুরো পরিবারের চোখেমুখে যেন ভেসে উঠেছে ক্লান্তি। হাবিবুল্লাহ আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় হামিম গ্রুপের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।

হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি রাজশাহী গিয়েছিলাম। কিন্তু গতকালকে ১ আগস্ট পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত শুনে রাতেই পরিবার নিয়ে রওনা হই। প্রথমে ট্রাকে যাত্রা শুরু করলেও নাটোর এসে সেটি নষ্ট হয়ে যায়। পরে সিএনজিতে সিরাজগঞ্জ আসি। এরপর লেগুনাতে গাদাগাদি করে চন্দ্রা পৌঁছাই। সবশেষ চন্দ্রা থেকে অটোরিকশায় বাইপাইল আসি। এতে মাথাপিছু আমাদের ১০০০ টাকা ভাড়া পড়ছে। তবে এখানে এসেও বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশা-ভ্যান কিছুই পাচ্ছি না।’

রংপুর থেকে হায়েস মাইক্রোবাসে ২০০০ টাকা সিটপ্রতি ভাড়ায় গাদাগাদি করে এসেছেন গার্মেন্ট শ্রমিক রুহুল মিয়া ও তার আরেক সঙ্গী।

রুহুল বলেন, ‘সরকার ঘোষণা দিছে ১ তারিখ গার্মেন্টস খুলবো। আমারে কাইলকা অফিস থাকি ফোন দিছে আসাই লাগবো। তাই লকডাউনের মইদ্দেই আইছি। হায়েস মাইক্রোবাসে রংপুর থাইকা বাইপাইল ২০০০ ট্যাকা নিছে। ওরা ১৩-১৪ জন নিছিলো মাইক্রোতে।’

পোশাক শ্রমিক খুশি আক্তার বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ থাইকা পিকআপে আইছি। ৫০০ ট্যাকা ভাড়া নিছে। কি করার আছে আমাগো? গার্মেন্ট খুলবো তাই আইতেই হইবো।’

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘একটা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, ১ আগস্ট দেশের সব পোশাক কারখানা চালু হবে। ইতোমধ্যেই কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কাছে কাজে যোগ দেয়ার জন্য খবর পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু এই ধরণের সিদ্ধান্ত যে গার্মেন্টস মালিকদের কাছে সরকারের একটা পরাজয় সেটাই আমরা জানতে পারলাম। ক’দিন আগেও কিন্তু শ্রমিক-মালিকরা জানতে চাচ্ছিলো যে কি হবে? তখন সরকারের মন্ত্রীরা বললেন, ৫ আগস্টের আগে কোনভাবেই শিল্প কারখানা চালু করার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু হঠাৎ গতকালকে এই প্রজ্ঞাপন দিয়ে শ্রমিকদের একটা ভোগান্তির মধ্যে ফেলা হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর