এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: উপকুলবাসী সুপার সাইক্লোন সিডর-আইলার ১১ বছর পরেও বাগেরহাটে দূর্যোগ মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও বেড়ি বাঁধ গড়ে উঠেনি।
ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগের আতংক কাটেনি উপকূলবাসীর দূর্যোগকালীন ও পরবর্তী করণীয় বিষয় প্রশিক্ষণ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হলেও অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে হতাশায় উপকূলবাসী।
এমতাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও টেকসই বেড়িবাধ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।
২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর রাতে প্রলয়ংকারী সুপার সাইকোন সিডর আছড়ে পড়ে বাগেরহাটের উপকুলের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জসহ জেলার ৯টি উপজেলায়। যার প্রভাবে ১০-১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাগেরহাটের জনপদের হাজার হাজার বাড়ি ঘর। মারা যায় অসংখ্য নারী পুরুষ শিশু।
পর্যাপ্ত সাইকোন শেল্টারের অভাবে সিডরে এ অঞ্চলে প্রাণহানির পরিমান বেশি ঘটেছিল বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
এরই মধ্যে সিডরের ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও দুর্গত এলাকাগুলোতে নির্মাণ হয়নি পর্যাপ্ত সাইকোন শেল্টার ও বেড়িবাঁধ। প্রতি বছর এখনও বর্ষা মৌসুমে শরনখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্থ’ হচ্ছে স্থানীয়রা।
বিভিন্ন দুর্যোগের পর ইউনিয়ন পরিষদ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগ্রত যুব সংঘের মহড়া প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকে সচেতন হয়েছেন দুর্যোগ সম্পর্কে।
বাগেরহাটের ৯ উপজেলায় বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৩৪ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। তবে বিদ্যমান জনসংখ্যা অনুযায়ী আরও ৩ শতাধিক সাইকোন শেল্টারের প্রয়োজন রয়েছে।
শরণখোলা উপজেলার উত্তর সাউথখালী গ্রামের মো. রতন খান (৩৫) বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই দেখছি নদীর পাড় ভেঙ্গে আমাদের গ্রামের অনেকের বাড়ি ঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখন নদী প্রায় আমাদের বাড়ির কাছে চলে আসছে। নদীর ভাঙ্গন ঠেকানো না গেলে আমরা বসবাস করতে পারব না।’
রায়েন্দা গ্রামের আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে সাইক্লোন শেল্টার অনেক দূরে। দুর্যোগের সময় গ্রামের অনেক লোক আশ্রয় নিতে যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় অনেকেই আবার বাড়িতে ফিরে আসে।’
একই গ্রামের আব্দুর রব চোকিদার (৫৫) বলেন, ‘সিডর ও আইলার পরে আমরা ভেবেছিলাম আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে সরকার আমাদের ভেড়িবাধ ও প্রয়োজনীয় সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করে দিবেন। কিন্তু কিছুই হয়নি।’
শরনখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই। যা আছে তাতে সংকুলান হয় না। আরও সাইকোন শেল্টার দরকার। দুর্যোগকালীন ও পরবর্তী করণীয় বিষয় শুধু প্রশিক্ষণ নিলে হবে না। প্রশিক্ষণের পর সরঞ্জামাদিও দরকার। আরও বেড়িবাধ ও সাইকোন সেল্টার প্রয়োজন।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা জাগ্রত যুব সংঘ মহড়া প্রকল্পের প্রশিক্ষক মো. নুরনবী আলম বলেন, সিডর ও আইলার পর থেকে সরকারী ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে উপকুলীয় এলাকাবাসীকে দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি ও পরবর্তী করণীয় বিষয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা যে কমিটিগুলো আছে সেগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দূর্যোগ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এখন যেকোন সময় দূর্যোগের বিষয়ে অবহিত করলে লোকজনকে সরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু সাইকোন শেল্টার পর্যাপ্ত নয়, আরও হলে ভাল হয়। এখনও কিছু কিছু কাজ চলছে। এব্যাপারে সরকারের আরও পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাগেরহাটের ৯ টি উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৩৪ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। এছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বেড়িবাধ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।