,

সালিশে ‘মীমাংসার’ টাকা মাতব্বরদের পকেটে

জেলা প্রতিনিধি, মাগুরা: মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কালিনগর গ্রামে ৯ বছরের এক শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে সনত মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন স্থানীয় মাতব্বররা।

কিন্তু জরিমানার ওই অর্থ দেওয়া হয়নি শিশুটির পরিবারকে। এক নিকটাত্মীয়ের হাতে ২০ হাজার টাকা গছিয়ে দিয়ে ঘটনাটির মীমাংসা করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, চর কালিনগর গ্রামের শিশুটি ১২ জানুয়ারি প্রতিবেশী অপর শিশুর সঙ্গে বাড়ির পাশে খেলছিল। এ সময় একই গ্রামের পূর্ণচন্দ্র মণ্ডলের ছেলে সনত মণ্ডল (৪৮) প্রলোভন দেখিয়ে শিশুটিকে বাড়ির মধ্যে নিয়ে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালান। পরে সে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে মা-বাবার কাছে অভিযোগ করে।

একপর্যায়ে ইউপি সদস্য জয়ন্তসহ স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে খবরটি পৌঁছলে তারা শিশুটির পরিবারকে থানা-পুলিশ করতে নিষেধ করে নিজেরাই সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন।

ঘটনার পরদিন বিকালে গ্রামের মন্দিরের পাশে ওই সালিশে ইউপি সদস্য জয়ন্ত ছাড়াও ইউপি সদস্য মতিন, সরোজিত মাতবর, মনোজিত, বিষ্ণু বাড়ৌ উপস্থিত ছিলেন বলে এলাকাবাসী জানান।

নির্যাতনের শিকার শিশুর বাবা, চাচা ছাড়াও গ্রামের আরও অনেকে জানান, সালিশে সনত মণ্ডলকে দোষী সাবস্ত করে মুচলেকা নেওয়া হয়, যাতে ভবিষ্যতে এমন কাজ আর না করেন। কিন্তু তাকে কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। সালিশ বৈঠক শেষে শিশুটির পরিবারকে মাতব্বররা ১০ হাজার টাকা দিতে চাইলে তা ফিরিয়ে দেওয়ায় তারা সুশিল বিশ্বাস নামে তাদের এক নিকটাত্মীয়ের কাছে ২০ হাজার টাকা গছিয়ে দিয়ে বিষয়টি চেপে যাওয়ার কথা বলেন।

এ বিষয়ে সুশিল বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে শিশুটির বড় চাচা বলেন, ‘আমাদের মেয়ের সম্মান বিক্রি করতে চাইনি। কিন্তু টাকা ফেরতও দেওয়ার উপায় নেই। গ্রামে সমাজে চলতে গেলে মাতব্বরদের কথার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

এদিকে ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি জানতে পেরে ইউপি সদস্য জয়ন্ত উপযাচক হয়ে এ প্রতিবেদককে ফোন করে কৈফিয়ত চান। তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনের সময় আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। থানা পুলিশ কত জায়গায় দরখাস্ত দিয়েছি তার কোনো বিচার পাইনি। অথচ শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি, তারপরও কেন এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। তবে অভিযুক্ত সনত মণ্ডলকে চড়-থাপ্পড় মেরে তার কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে বলে স্বীকার করলেও অর্থ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য জয়ন্ত।

এই বিভাগের আরও খবর