বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: ভুল চিকিৎসার শিকার গৃহবধূ খাদিজা বেগম (৪০) সারা রাত রাস্তায় থাকার পর অবশেষে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তাকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এর আগে সোমবার বিকালে স্বজনরা খাদিজা বেগমকে কালিশুরী কুমারখালী এলাকায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা স্লোব বাংলাদেশ পরিচালিত ইনগ্রিড মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে খাদিজা বেগমকে ভর্তি না করে ভেতর থেকে মূল গেট বন্ধ করে দেয়। এরপর সারা রাত ওই হাসপাতালের সামনে সড়কের ওপর খোলা আকাশের নিচে ছিলেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের মমিনপুর গ্রামের জেলে সহিদুল ইসলাম সিকদারের স্ত্রী খাদিজা বেগম বেশ কিছু দিন ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। গত ২১ নভেম্বর খাদিজা বেগমকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য কালিশুরী ইনগ্রিড মেমোরিয়াল হাসপাতালে যান তার স্বজনরা। সংশ্লিষ্টরা পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে তার পেটে টিউমার হয়েছে এবং দ্রুত তা অপারেশন করতে হবে বলে জানান।
পরের দিন ২২ নভেম্বর স্বজনদের না জানিয়ে খাদিজা বেগমকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আহম্মেদ কামাল তুষার নামের এক চিকিৎসক তার নিতম্ব থেকে জরায়ু পর্যন্ত কেটে ফেলেন। কিছুক্ষণ পর রোগীর অবস্থার অবনতি হলে অপারেশন থিয়েটারে রেখেই চলে যান চিকিৎসক। এরপর হাসপাতালের কয়েকজন নার্স ওই গৃহবধূর কাটা অংশ সেলাই করেন।
ওই গৃহবধূর নিকট আত্মীয় জালাল আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, ভুল চিকিৎসার কারণে খাদিজা বেগমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে ইনগ্রিড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের খরচে উন্নত চিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর পর খাদিজা বেগমকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য খাদিজা বেগমকে ঢাকা নেয়ার পরামর্শ দেন বরিশাল মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা। বিষয়টি কালিশুরী ইনগ্রিড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা তাকে ঢাকায় নেয়ার জন্য অপরাগতা প্রকাশ করে। খাদিজা বেগমের দরিদ্র পরিবারের পক্ষে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তাই বরিশাল থেকে সোমবার খাদিজা বেগমকে পুনরায় কালিশুরী ফিরিয়ে আনা হয়।
স্বজনরা খাদিজা বেগমকে ইনগ্রিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ তাকে সেবা না দিয়ে মুল গেট তালাবন্ধ করে দেন। উপায় না পেয়ে হাসপাতালের সামনে সড়কের ওপর অবস্থান নেন খাদিজা বেগম ও তার স্বজনরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে সোমবার সারারাত ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন খাদিজা বেগম। তারপর একটুও দয়া দেখায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ভুল চিকিৎসার অভিযোগ অস্বীকার করে ইনগ্রিড হাসপাতালের চিকিৎসক আহম্মেদ কামাল তুষার বলেন, এখানে তার চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তার জরায়ুর একটি অংশে টিউমারে আটকে আছে। এ জন্য তার জন্য জটিল অপারেশন প্রয়োজন। এ ছাড়াও তার হার্টে সমস্যা আছে। যে কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার প্রয়োজন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার খরচ দিবে বলেও জানান তিনি।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, খাদিজা বেগমকে আমরা ভর্তি করেছি। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিচ্ছি।
বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।