কয়রা (খুলনা): খুলনার পাইকগাছায় সামাজিক বনায়নের চরভরাটি জমি দখল করে চিংড়ি ঘের করা হয়েছে। ঘেরের বদ্ধ লোনা পানিতে বনায়নের গাছ মরে যাচ্ছে। সামাজিক বনায়নের সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে বনায়ন নষ্ট করে দিচ্ছে দখলকারীরা। সেই সঙ্গে নিজেদের প্রয়োজনে বনায়নের গাছ কেটে ফেলছে তারা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উপকূলের বাঁধ রক্ষায় চরের জমিতে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সামাজিক বন বিভাগের সহযোগিতায় স্থানীয় সুবিধাভোগী মানুষ ২০১৫ সালে উপজেলার লতা ইউনিয়নের শিবসা নদীর চরে বনায়ন গড়ে তোলে। সম্প্রতি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বনায়নের ভেতর বাঁধ দিয়ে লোনা পানি আটকে রেখেছেন। এ মুহূর্তে বদ্ধ লোনা পানির প্রভাবে বনায়নের বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ উদ্ভিদ মরতে শুরু করেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, লতা ইউনিয়নের হাড়িয়া মৌজায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৮/১৯ নম্বর পোল্ডারে হাড়িয়া পুরাতন খেয়াঘাট থেকে দক্ষিণে হাড়িয়া পাকা ঘাট পর্যন্ত শিবসা নদীর চরে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে সবুজ বনায়ন গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে গোলপাতা, কেওড়া, বাইন, কাকড়া, সুন্দরী, ওড়াসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। গাছগুলোর তদারকি ও পাহারার জন্য সামাজিক বন বিভাগ থেকে স্থানীয়দের নিয়ে সুবিধাভোগী দল গঠন করে দেওয়া হয়। তারা প্রতিনিয়ত সেখানে পাহারার ব্যবস্থা করবে। এ জন্য তাদের নির্দিষ্টভাবে সুবিধা দেওয়ার কথা রয়েছে। সৃজিত এ বন রক্ষায় সুবিধাভোগীদের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন থেকে বনভূমি সংরক্ষণ ও গবাদিপশু নিয়ন্ত্রণের জন্য সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার হাড়িয়াচর বনায়ন সমিতির সভাপতি গৌতম রায় ও সম্পাদক প্রশান্ত বিশ্বাস অভিযোগ করেন, গত মে মাসে উপজেলার মঠবাটী গ্রামের ছইল উদ্দিন সরদার, ঘোষাল গ্রামের আব্দুল্লাহ গাজী, খবির গাজী ও রেজাউল ইসলাম দু’দফায় বনায়নের বড় একটি অংশের জমিতে বাঁধ দিয়ে চিংড়ি ঘের শুরু করেন। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সাংসদ আখতারুজ্জামান বাবুর কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। সাংসদ অভিযোগটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেন। ইউএনও সরেজমিন তদন্ত করে উপজেলা বন কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেও তার প্রতিকার মেলেনি। সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, উপজেলা সামাজিক বন কর্মকর্তার গোপন সহযোগিতায় বনের ক্ষতি করে চিংড়ি ঘের করা হচ্ছে।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা সামাজিক বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় বলেন, কিছু ব্যক্তি ওই জমি নিজেদের বলে দাবি করে সেখানে চিংড়ি ঘের শুরু করেছে। তবে বনায়নের সময় কেউ ওই সম্পত্তি দাবি করতে আসেনি। সুবিধাভোগীদের অভিযোগের পর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় থানায় বসলেও সুফল পাওয়া যায়নি।
ঘের মালিকদের দাবি, তারা ওই জমির রেকর্ডীয় মালিকদের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন। তবে ইজারার কোনো কাগজ তারা দেখাতে পারেননি।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকায়না বলেন, ‘সামাজিক বনায়নের জমি দখল ও গাছ কাটার বিষয়ে একটি অভিযোগ তদন্তের জন্য এমপির নির্দেশনা ছিল। এ বিষয়ে তদন্ত করে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বনায়নের জমি দখলের বিষয়ে আমাকে এখনও জানানো হয়নি। সামাজিক বনায়নের ক্ষতি করা জঘন্য অপরাধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।