,

সবুজের মাঠে সূর্যমুখীর হাসি

জেলা প্রতিনিধি, দিনাজপুর: উত্তরের শস্য ভাণ্ডার খ্যাত দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় এবারই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। এই উপজেলায় মাটির উর্বরতার সঙ্গে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্যান্য সবজির পাশাপাশি রবি শস্যের চাষাবাদে কৃষি বিভাগের সহায়তায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ।

সবুজের মাঠে জুড়ে সূর্যমুখীর মায়াবী হাসি আর এটি চাষে লাভজনক হওয়ায় তৈরি হয়েছে বাণিজ্যিক চাষের অপার সম্ভাবনা। কৃষকের কাছে জনপ্রিয় ও আগ্রহী করে তুলতে উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী চাষ শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার দুহশুহ, নেউলা, হোসেনপুর ও ভান্ডারদহ গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, ধান, রসুন, ভুট্টা ও গমের আবাদের সাথে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ।

মাঠজুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে ও ছবি তুলতে আসছে দর্শনার্থীরাও। সূর্য যখন যেদিকে হেলে যায়, সূর্যমুখী ফুলও সেদিকে হেলে থাকে, যা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে আর সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকে। ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হলেও দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে কৃষকরা আগতদের তেমন কিছুই বলছে না কিন্তু ফুল ছিঁড়ে ফেলার কারণে কিংবা নিয়ে যাওয়ায় তারা দর্শনার্থীদের উপর অসন্তুষ্ট।

খানসামা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তেল জাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় একশত বিশজন কৃষক একশত বিশ বিঘা জমিতে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন।

উপজেলার নেউলা গ্রামের কৃষক সাফিয়ার রহমান জানান, টেলিভিশন দেখে এই ফুল চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পরে কৃষি অফিসের সহায়তায় বীজ পেয়ে ১ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেছি। সার, সেচ ও কীটনাশক মিলিয়ে বিঘাপ্রতি সূর্যমুখী চাষে খরচ হবে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে খরচ বাদে বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই এই ফলন পাওয়া যাবে।

ভান্ডারদহ গ্রামের নুরল ইসলাম জানান, ধান-পাট চাষে প্রচুর পরিশ্রম এবং খরচ হয়। কিন্তু সূর্যমুখী চাষে খরচ কম লাভ বেশি। যে কারণে আগামীতে অনেক কৃষকই সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকবে। সূর্যমুখীর কাণ্ড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ও বিক্রি করা যাবে। যা থেকে বাড়তি একটা লাভ মিলবে।

সূর্যমুখী ফুল চাষি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন জানান, উপজেলায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হচ্ছে। অনেকেই সৌন্দর্য বর্ধনকারী ফুল হিসেবে বাড়ির উঠানে এটা লাগিয়ে থাকতেন। কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী এই প্লটের মাধ্যমে স্থানীয়দের মাঝে এটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। আগামীতে স্থানীয়ভাবে এর ব্যাপকতা অনেক বাড়বে এবং কৃষকরাও সূর্যমুখী চাষে লাভবান হবেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শ. ম. জাহেদুল ইসলাম ও কেরামত আলী জানান, আরডিএস-২৭৫ জাতের সূর্যমুখী ফুল এখানে চাষ হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়তই প্লটগুলো পর্যবেক্ষণ করছি ও বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি অল্প খরচে লাভবান হবে কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় বলেন, সূর্যমুখী একটি তেল জাতীয় ফসল। এটি স্থানীয়ভাবে উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবেও পরিচিত। ভোজ্য তেলের মধ্যে সূর্যমুখী শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো। এটি শরীরের কোলেস্টেরল ঠিক রাখে তাই এটির অনেক চাহিদা রয়েছে। তিনি জানান, কৃষকদের সঙ্গে কোম্পানির প্রতিনিধিদের আন্তঃসম্পর্ক তৈরি করে দেয়া হয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে কোম্পানি সরাসরি ফুলটির বীজ কিনবেন। ফলে কৃষকরা এটি কোথায় বিক্রি করবেন তা নিয়ে চিন্তা থাকছে না। আশা করছি চাষিরা প্রতি বিঘায় অন্তত ৩০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন।

এই বিভাগের আরও খবর