জেলা প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বাবার বিরুদ্ধে সিনথিয়া ইসলাম নামের তিন বছর বয়সী এক শিশুকে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় গত ১৭ মার্চ শিশুটির মা শাহিনুর আক্তার বাদী হয়ে সন্তান উদ্ধারের জন্য বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছে। তবে অভিযোগ করার ২৮ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলাটি নথিভুক্ত ও সন্তান উদ্ধার না হওয়ায় সন্তানের ভবিষৎ নিয়ে সঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তার মা।
শাহিনুর আক্তারের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দরিভেলানগর গ্রামের আইয়ুব খানের মেয়ে শাহিনুর আক্তারের সঙ্গে পাইকারচর গ্রামের মান্নান মিয়ার ছেলে সুজন মিয়ার বিয়ে হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে। তিন বছর আগে তাদের সংসারে সিনথিয়ার জন্ম হয়। তবে বিয়ের পর থেকে শ্বশুর বাড়িতে অত্যাচার ও মানষিক নির্যাতনের শিকার হন শাহিনুর। পারিববারিক অশান্তির কারণে গত মার্চ মাসের ১২ তারিখ স্থানীয় কয়েকজন ব্যাক্তিদের উপস্থিতিতে উভয়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এ সময় বাবা সুজন মিয়া সিনথিয়াকে তার কাছে রেখে দেন। কয়েকদিন পর সে টাকার বিনিময়ে মেয়েকে ঢাকার এক দম্পতির কাছে বিক্রি করে দেয়।
এদিকে গত ১৬ মার্চ শাহিনুর আক্তার মেয়েকে দেখতে পাইকারচর গ্রামে সুজন মিয়ার বাড়িতে গেলে তারা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং মা-মেয়ে দুজনকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। সে সময় শাহিনুর আক্তার চলে আসেন। এ ঘটনায় গত ১৭ তারিখ শাহিনুর আক্তার তার মেয়েকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সুজনের পরিবারকে কন্যা সন্তানকে থানায় হাজির করতে সুজনের পরিবারকে চাপ দেয়। পরে গত ৪ এপ্রিল সুজন মিয়া ও তার পরিবার শিশু সিনথিয়াকে থানা হেফাজতে দেওয়ার কথা বললেও এখনও থানায় হাজির করেনি।
ছলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্র্ডের সদস্য মনির হোসেন বলেন, ‘শুনেছি সুজন তার মেয়েকে অন্যত্র দত্তক দিয়েছে। গত ৪ তারিখ শিশুটিকে থানায় হাজির করার কথা ছিলো। কিন্তু তারা তাকে নিয়ে আসেনি। পরে সন্ধ্যায় এসআই নুরুজ্জামান সহ আমরা সুজনের বাড়িতে যায়। তখন এক ইউপি চেয়ারম্যান ফোন দেওয়ার কারণেএসআই নুরুজ্জামান চলে যান।’
শিশুটির মা শাহিনুর আক্তার বলেন, ‘আমাদের ডির্ভোস এর সময় জোর করে তারা আমার মেয়েকে রেখে দেয়। আমার স্বামীর বাড়ির লোকজন কয়েকদিন পর টাকার বিনিময়ে আমার মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে। গত ১৬ মার্চ আমার মেয়ের খোঁজে তাদের বাড়িতে গেলে আমার মেয়েকে না পেয়ে জিঙ্গেস করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। প্রাণনাশের হুমকি দেয়। থানায় অভিযোগ করেছি। বার বার ঘুরছি। এতদিন পেরিয়ে গেলেও আমার মেয়ে এখনও উদ্ধার হয়নি।’
এ ব্যাপারে সুজন মিয়ার মোবাইল নম্বরে একাধিক বার কল করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাজু আহমেদ বলেন, ‘আমি সুজনের মাকে থানায় ডেকেছিলাম। তিনি আমাকে গত ৪ মার্চ শিশুটিকে থানায় এনে মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলে চলে যান। কিন্তু তিনি শিশুটিকে নিয়ে থানায় আসেননি। এ ঘটনায় মামলা রেকর্ড করিনি এখনও, আমি চাচ্ছি শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কাছে দিয়ে দিতে।’