,

সংসদ নির্বাচনে ইভিএম থাকছে না, ব্যালট পেপারে ভোট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনেই আর ইভিএম ব্যবহার করা হবে না, ৩০০ আসনের সবগুলোতেই ভোটগ্রহণ হবে সনাতনী ব্যালট পেপার আর স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করে।

অর্ধশতাধিক আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার মেশিন হাতে থাকলেও মেরামতের জন্য অর্থ প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় নির্বাচনের সাত মাস আগে ইসিকে নতুন এই সিদ্ধান্ত নিতে হল।

সোমবার ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সভা শেষে কমিশনের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান।

আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমানও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, “আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনে ব্যালট পেপার এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে বলে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানের মধ্যেও দেড়শ আসনে যন্ত্রে ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। সেই লক্ষ্যে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকায় ২ লাখ ইভিএম কেনার একটি প্রকল্প প্রস্তাবও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থ সঙ্কটের এই সময়ে সরকার তাতে সায় দেয়নি।

এ অবস্থায় ইসির হাতে থাকা দেড় লাখ ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ করে অন্তত ৫০-৮০টি আসনে ইভিএম ভোট করার সক্ষমতা ছিল ইসির। সেই লক্ষ্যে ইভিএম মেরামত ও ব্যবস্থাপনার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল সরকারের কাছে।

কিন্তু সেই চেষ্টাতেও সাফল্য আসেনি জানিয়ে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, অর্থমন্ত্রণালয় থেকে এ মেশিন মেরামতের জন্য যে ১২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল; এ অর্থ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তার কারণে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে আসন্ন পাঁচ সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার অব্যাহত থাকবে বলে জানান ইসি সচিব।

তিনি বলেন, ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী সর্বোচ্চ দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮০০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করা হলেও প্রকল্পটি আর গৃহীত হয়নি।

ইভিএমের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফকে ১ লাখের বেশি ইভিএমের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে, তবে আগামী অর্থ বছরে পাওয়া যেতে পারে বলে নিশ্চয়তা দেয়।

এ অবস্থায় ইভিএমগুলোর কোয়ালিট চেকিং করে কাজ করার মতো অর্থ ইসির হাতে নেই। তাছাড়া এটা সময় সাপেক্ষ বিষয়, বলেন ইসি সচিব।

ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতাও কমিশনের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে বলে জানান তিনি।

জাহাংগীর আলম বলেন, নির্বাচনের আগে সময় স্বল্পতা ও অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অর্থ পেতে নিশ্চয়তা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ঐকমত্যের অভাব- সব বিষয় বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে যাবে আর সাত মাস পর। ভোটের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোও গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন।

এরইমধ্যে নির্বাচনী আইন সংস্কার, সীমানা পুননির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, গণমাধ্যমকর্মী নীতিমালার কাজ এগিয়ে চলছে। ভোটের আগেই পাঁচ সিটির নির্বাচন সারতে প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।

এই বিভাগের আরও খবর