বাসস: ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া আন্তর্জাতিক পদকের সংখ্যা ৩৭টিতে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এডভাইজরি কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টা অ্যাম্বাসেডর টি পি শ্রীনিবাসন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সর্বশেষ এই পদকটি হস্তান্তর করেন। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও পারস্পরিক সন্তোষজনক সম্পর্ক, নিজ দেশের কল্যাণ, বিশেষ করে নারী ও শিশু এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতায় তার অঙ্গীকারের স্বীকৃতি হিসেবে পদকটি দেয়া হয়।
গত মার্চে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করা হয়। বার্লিনে ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ইন্সটিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন প্রদত্ত এ পদক গ্রহণ করেন জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ। নারীর ক্ষমতায়ন ও দক্ষিণ এশিয়ায় অনন্য নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে এ পদক দেয়া হয়।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও মানবিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রী আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ গ্রহণ করেন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সি ‘দি ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) এবং নিউইয়র্ক, জুরিখ ও হংকংভিত্তিক তিনটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে দুটি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে।
বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্বদানের জন্য গত বছরের ২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল ওমেন’স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল সামিট অব ওমেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক ভোজসভায় মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মাননা জানায়। সম্মেলনে অংশ নেয়া বিশ্বের প্রায় ১৫শ’ নারী নেতৃত্বের উপস্থিতিতে তিনি গ্লোবাল উইম্যান’স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
চতুর্থবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম আন্তর্জাতিক মহলের বাড়তি মনোযোগে আসেন ১৯৯৮ সালে। ওই বছর দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ইউনেস্কো প্রধানমন্ত্রীকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।
১৯৯৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অ্যাওয়ার্ড হস্তান্তরকালে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ফেদেরিকো মেয়র বলেন, জাতি গঠনে আপনার পিতার অনুসৃত পথ অবলম্বন করে আপনি দেশকে শান্তি ও পুনর্মিলনের পথে নিয়ে গেছেন। আন্তর্জাতিক একাডেমিক কমিউনিটি শেখ হাসিনার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম এবং ভারতের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন, সাহিত্য, লিবারেল আর্টস এবং মানবিক বিষয়ে ৯টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে।
২০১০ সালে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো (এমডিজি) অর্জনে, বিশেষ করে শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসে অবদানের জন্য জাতিসংঘের অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিস) অর্জনে আইসিটির ব্যবহারে প্রচারণার জন্য শেখ হাসিনাকে ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয়।
উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) ও ইউনেস্কো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীকে ‘ডব্লিউআইপি গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। চলতি বছরের মার্চ মাসে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তাকে এ পদক দেয়া হয়। এছাড়া নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শেখ হাসিনাকে ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী ২০১১ ও ২০১৩ সালে দু’বার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। স্বাস্থ্য খাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তাকে এ সম্মাননা দেয়া হয়। এছাড়া পার্ল এস বাক অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৯) সিইআরইএস পদক, মাদার তেরেসা পদক, এমকে গান্ধী পদক, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার (২০০৯), ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণপদক, হেড অব স্টেট পদক, গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড (২০১১, ২০১২) ও নেতাজী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৭) প্রদান করেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শেখ হাসিনাকে একটি সনদ প্রদান করে।
খাদ্য উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও আইসিটি উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য তাকে এ স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের অ্যালবার্টা ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিবারেল আর্টসে ভূষিত করা হয়। এছাড়া তাকে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ প্রদান করে।
১৯৯৯ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে দেসিকোত্তামা ডিগ্রি এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করে। শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় অবদানের জন্য তাকে ২০০৫ সালে রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করে।
২০০০ সালে ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস তাকে অনন্য সম্মাননা প্রদান করে। ২০১৫ সালে শেখ হাসিনা পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ বৈশ্বিক পুরস্কার চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৬ সালে শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ প্রদান করা হয়। ওই বছরই নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইউএন উইমেন প্রধানমন্ত্রীকে ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কার এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম তাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার প্রদান করে।