কক্সবাজার প্রতিনিধি: শুক্কুর ফকির এবার নেমেছে ভোট ভিক্ষায়। সেই সাত সকালেই বাসা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। পথে-ঘাটে আর অলি-গলিতে কেবল টাকার জন্য হাত টানছেন না তিনি। ভিক্ষা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের সমর্থনে ভোটটিও আদায় করে ছাড়ছেন। সৈকত শহর কক্সবাজারের অতি পরিচিত মুখ শুক্কুর ফকিরের আবেদনটা হচ্ছে- ‘সুখ চাইলে নৌকায় ভোটটা দিবা।’
কক্সবাজারে কত অগণিত সংখ্যক ভক্ত রয়েছে শুক্কুর ফকিরের তা বলা মুশকিল। পঁচাত্তরোর্ধ্ব বয়সের এ বৃদ্ধ লোকটির কাছে বেশির ভাগ পুরুষ পুত্রতুল্য এবং নারীরা কন্যাতুল্য সম্পর্কের। অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহারের এ বৃদ্ধ লোকটি এ কারণেই শহরবাসীর কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। ভিক্ষার জন্য কোন পীড়াপিড়িও নেই। যে যেরকম দান করেন তাতেই খুশি হন তিনি।
বেশ মানবিক গুণাবলীরও অধিকারী হচ্ছেন- আবদুশ শুক্কুর প্রকাশ শুক্কুর ফকির। মানুষের দুঃখে তিনি কাঁদেন-আবার মানুষের সঙ্গেই তিনি হাসেন, এরকম স্বভাবেরই লোক তিনি। বেশ ক’বছর আগে একবার ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল কক্সবাজার উপকূলে। সেইবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দুর্গতদের জন্য সাহায্য চেয়ে রাস্তায় দান বাক্স বসিয়েছিল। শুক্কুর ফকির সেই দূর্গতদের জন্য অকাতরে দান করেছেন।
এমনকি এক টাকা ভিক্ষা পেয়েও তিনি দান করেছেন দূর্গতদের জন্য স্থাপিত দান বাক্সে। এ ছাড়াও শুক্কুর ফকির ভিক্ষা নিয়ে আবার তিনিই কিনা অন্ধ আর চলৎশক্তিহীন ভিক্ষুকদের দান করেন।পত্রিকায় শুক্কুর ফকিরের এমনসব মানবিকতার কথা প্রকাশের পর তার (শুক্কুর ফকির) কথা ছড়িয়ে পড়ে দেশ-দেশান্তরে। এ কারণে শুক্কুর ফকিরকে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা পছন্দও করেন।
শুক্কুর ফকিরের আদি বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায়। বহু বছর আগে তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন পাকিস্তানের করাচীতে। পাকিস্তান পাড়ি দেওয়ায় তিনি ভোটার হতে পারেননি এদেশে। বহু বছর অতিবাহিত হবার পর অবশেষে তিনি ভোটার হয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে। এবারই তিনি প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর আগে পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
এবার প্রথম জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিবেন শুক্কুর ফকির-এ আনন্দ যেন তাকে পেয়ে বসেছে। শুক্কুর ফকির নিজেও যেন জাতীয় নির্বাচনের কোনো দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত একজন প্রার্থী। একজন দলীয় প্রার্থীর চেয়েও তিনি নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন সিরিয়াসলি। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি কেবল টাকা-পয়সার ভিক্ষা নয়-তিনি জন জন করে ভোট প্রার্থনা করছেন নৌকা প্রতীকের জন্য।
ভোট ভিক্ষার সময় যিনি নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট প্রার্থনার কারণ জানতে চান তাকে এক মায়াবী আদর আর যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েও দিচ্ছেন- কেন তিনি নৌকার পক্ষে। শুক্কুর ফকির বলেন-‘ এ বাংলার এক হতভাগী এতিম কন্যা হচ্ছেন শেখ হাসিনা। তিনি আমার মা-তিনি আমার কন্যা। তাঁর প্রতীক নৌকা। সুতরাং ভোটও নৌকার।’ শুক্কুর ফকিরের যুক্তি হচ্ছে- দেশের যা উন্নয়ন তা নৌকার সরকারের আমলে হয়েছে।
কক্সবাজারের তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প, রেল লাইন প্রকল্প, আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর প্রকল্প থেকে শুরু করে অনেক মেগা প্রকল্পের কথাই মুখস্থ শুক্কুর ফকিরের। ভোটারদের অকাট্য যুক্তি দেখাচ্ছেন তিনি- কেন নৌকায় ভোট দিতে হবে। তিনি বলেন- বিএনপি আমলে ১৮ টাকা কেজির ভাত খেয়েছি কিন্তু পেট পুরে খেতে পাইনি। আর এখন ৩০ টাকা কেজির ভাত খাচ্ছি একদম পেটপুরে। শুক্কুর ফকির বলেন, প্রতিদিন তিনি ২০০ থেকে ৫০০ জনের নিকটই আবেদন রাখছেন- ‘যদি সুখে থাকতে চান তাহলে নৌকায় ভোটটা দিবেন।’