নিজস্ব প্রতিদেক: ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীত জেঁকে বসেছে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশে। তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। গরমের কাপড়ের চাহিদা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া তীব্র শীতে ঠাণ্ডজনিত রোগ বেড়েছে। ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন-
পাবনা: টানা তিনদিন সূর্যের দেখা নেই বললেই চলে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশা, কুয়াশা কাটলেই হাড় কাঁপানো বাতাস জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে, সবচেয়ে বিপাকে পড়েন নিম্ন আয়ের মানুষ। শীত নিবারন করতে ছুটছে পুরাতন কাপড়ের দোকানে, ফুটপাত থেকে সাধ্যমত নানা প্রকার গরম কাপড় সংগ্রহ করছে, ফুটপাতের পুরাতন শীতের কাপড় ব্যবসায়ী আলমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রকার কাপর বিক্রি করলেও, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষের কাপড়ের চাহিদা বেশি, এবং গত কয়েক দিনের তীব্র শীতের কারনে বিক্রি বেড়েছে, প্রকারভেদে এসব শীতের পোশাক ৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
একজন ক্রেতা তিনি পেশায় দিন মজুর তিনি বলেন আমরা বাপু দিন আনি দিন খাই, আমাদের নতুন কাপড় কেনার সাধ থাকলেও সাধ্য নেই তাই এখান থেকে কমদামে কাপড় কিনি। এদিকে টানা কয়েকদিনের শীতের কারনে ঠান্ডা জনিত রোগ যেমন, নিউমোনিয়া, এ্যজমা, সর্দি কাশি নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে এবং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগীর সংখ্যা, এসব রোগীর মাঝে বেশিরভাগ শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ।
এ বিষয় এ পাবনা সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন আমাদের উত্তরবঙ্গে শীত বেশি সেকারনে এসময় হাসপাতালে ঠান্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা বেশি, সেলক্ষ্যে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ঔষধ ও অন্যান্য ব্যবস্হা রয়েছে। নির্বিঘ্নে সঠিক সেবা দিচ্ছি ও এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ: ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীত জেঁকে বসেছে যমুনাপাড়ের শহর সিরাজগঞ্জে। সেই সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। ফলে বিপাকে পড়ছে এলাকার শ্রমজীবী মানুষগুলো। মঙ্গলবার সকাল থেকেই সিরাজগঞ্জ জেলা শহরসহ আশপাশের অঞ্চলগুলো কুয়াশাচ্ছন্ন রয়েছে। এই জেলায় কয়েক ফুট দূরের দৃশ্যও চোখে পড়ছে না। ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কসহ জেলার সব রুট। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি বদরুল কবির জানান, কুয়াশায় ঢেকে গেছে মহাসড়কগুলো। তবে যানবাহনের চাপ কম থাকায় সমস্যাও নেই।
তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘সিরাজগঞ্জ নদী ও বিল অঞ্চল হওয়ায় ঘন কুয়াশা একটু বেশি থাকে। কুয়াশার কারণে ঠান্ডা বাতাস বইছে, তবে সেটা শৈত্যপ্রবাহ নয়। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলিসিয়াসের নিচে নেমে এলে তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। কয়েক দিন ১০ থেকে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করার সম্ভাবনা রয়েছে।‘
নোয়াখালী: নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে বিভিন্ন এলাকা, বাসস্ট্যান্ডে, ফুটপাতে, রেলস্টেশনে থাকা ছিন্নমূল, বয়স্ক ও কর্মজীবী মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। সোমবার (২ জানুয়ারি) মধ্যরাতে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকার দুই শতাধিক শীতার্ত মানুষের মাঝে এ কম্বল বিতরণ করা হয়। নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) দেওয়ান মাহবুবুর রহমান সোনাপুর ও মাইজদী রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে ভবঘুরে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও অসহায়দের মাঝে এ কম্বল বিতরণ করেন।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিনের তীব্র শীতে ছিন্নমূল মানুষরা কষ্টে দিনযাপন করছেন। তাদের পাশে এখনই দাঁড়ানোর সময়। এ রকম যারা ভাসমান জীবনযাপন করছেন তাদের পর্যায়ক্রমে শীতবস্ত্র দেওয়া হবে। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজিমুল হায়দার, নোয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বায়েজীদ-বিন-আখন্দ, জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান খানসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
সারিয়াকান্দি: বগুড়ার সারিয়াকান্দির গ্রামাঞ্চগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। উত্তর পশ্চিমের হিমেল হাওয়ায় জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। কয়েকদিন ধরেই গভীর রাত হতে শুরু করে প্রায় দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা দিয়ে ঢাকা থাকে। কুয়াশার জন্য উপজেলার বিভিন্ন সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে বেশ সকাল পর্যন্ত। গত শনিবার বেলা ১১ টায়, রবিবার ১২ টায় সূর্য উঁকি মেরেছে। এর আগে মেলেনি সূর্যের দেখা। রবিবার সকাল পর্যন্ত উত্তরের হিমেল হাওয়ার জন্য কনকনে শীত শুরু হয়েছে গ্রামগুলোতে। প্রচন্ড কুয়াশার জন্য গাছের পাতা হতে টপটপ করে বৃষ্টির মত পানি পরছে। গৃহপালিত পশুগুলো চটের চাদর গায়ে দিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে একমনে জাবর কাটছে আর লোমগুলো সোজা দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে তারা শীতার্ত।
প্রচন্ড শীতের মাঝেও কর্মঠ মানুষগুলো বেরিয়ে পরেছে। কৃষকরা হালকা শীতের কাপড় পরেই ছুটছে ক্ষেতের দিকে। দিনমজুর এবং শ্রমিকরা বেড়িয়ে পরেছে তাদের নিজ নিজ কাজে। তবে তাদের শরীরে গরম কাপড়ের অভাব ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়। ভ্যান শ্রমিকরা শীতের বাতাসকে উপেক্ষা করেই ছুটছেন পেটের দায়ে। বয়স্ক মানুষরা প্রচন্ড শীতে ঘরবন্দী হয়েছেন। যাদের শীতের কাপড় নেই তারা গ্রামের মেম্বার চেয়ারম্যান এবং নেতাদের বাড়ীতে গিয়ে শীত নিবাড়নের জন্য কম্বলের প্রার্থনা করছেন।
উপজেলার পৌর এলাকার হিন্দুকান্দি গ্রামের ঘুটু প্রাং বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই সারিয়াকান্দিতে বিকাল হতে শুরু করে রাত এবং পরদিন বেশ সকাল পর্যন্ত কনকনে শীত অনুভূত হয়। গরম কাপড় ছাড়া বাইরে বের হওয়া যায়না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্যমতে, ইতিমধ্যে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে শীতবস্ত্র (কম্বল) ৬হাজার ৩শ’ ৭০টি বিতরণ করা হয়েছে।
বগুড়া: বগুড়ার গাবতলী সুখানপুকুর ইউনিয়ন পরিষদে মানবিক সহায়তা কর্মসূচীর আওতায় শীতার্তদের মাঝে সোমবার কম্বল ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রদত্ত চাদর বিতরণ করা হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে এক সুধী সমাবেশ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান রফি নেওয়াজ খান রবিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম মুক্তা ও রেকসেনা আকতার, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল খান জনি, সহ-সভাপতি শরৎ চন্দ্র এবং সাবেক সভাপতি ধন্য গোপাল সিংহ।