,

শীতের কামড়ে জবুথুবু শশীবালারা

বগুড়া প্রতিনিধি: রেলওয়ে স্টেশনে একটিমাত্র যাত্রী ছাউনি। যার মেঝেটা স্যাঁতস্যাঁতে। বিভিন্ন স্থানে লাগানো লোহালক্করগুলো মরিচায় ভরা। ছাদ ও চারপাশের দেয়াল থেকে মাঝেমধ্যেই খসে পড়ে পলেস্তার।

ছাউনির এক কোণায় বসে আছেন বয়োঃবৃদ্ধ এক নারী। পরনের কাপড়ের ওপর যেনতেন মানের চাদর ও কম্বল জড়িয়েছেন। তবু গায়ের কাঁপুনি থামছে না। শীতের কামড়ে ক্রমেই জড়োসড়ো হয়ে পড়ছেন তিনি। তাই কাপড়ের আঁচলে বাঁধা পানের কৌটা বের করেন। অর্ধেক আকারের পানে চুন লাগান। কয়েক পদের জর্দ্দা নেন। এরপর কাঁচা সুপারির কিছু গুঁড়ো সেই পানে দিয়ে ভরে মুখে নেন।

কিন্তু শীতের কারণে চোয়ালও লেগো আসছে বয়োঃবৃদ্ধ এই নারীর। পান চিবুনির পর কাঁচা সুপারির গুণে দেহে কিছুটা গরম অনুভব করেন। তবে শীতের কারণে ঘুম আসছে না। আবার ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে সকালেই এই নারীকে ছুটতে হবে মানুষের দ্বারে দ্বারে।

এই নারীর পাশেই স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে চট বিছিয়ে কয়েকটি স্থানে ঘুমোচ্ছেন বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ। একটু ফাঁকে বসার স্থানে হাতে মাথায় রেখে ঘুমোচ্ছেন একজন পুরুষ।

তবে ঘুমের ঘোরে মাঝে মধ্যেই এসব নারী-পুরুষ মোচড় দিয়ে জেগে উঠছেন। মাথাসহ পুরো শরীরে সমস্ত কাপড় জড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু ছাউনির একাধিক ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বাতাস প্রবেশ করছে। ঠাণ্ডায় ঘুমের ঘোরে থাকা নিম্ন আয়ের মানুষগুলো শীতে জবুথুবু হয়ে শুয়ে আছেন।

বয়োঃবৃদ্ধ সেই নারীর নাম শশীবালা। স্বামীর নাম পান কুমার। বয়সের ভারে শরীরে রোগবালাই বাসা বেঁধেছে। কানেও তেমন একটা ভালো শুনতে পান না।

বাংলানিউজের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে তিনি শুধু নিজের নাম ও স্বামীর নাম বলতে পারলেন। কষ্ট করে বলেন, উত্তরাঞ্চলের চিলমারীতে তার গ্রাম। স্বামী কবে মারা গেছেন তাও স্মরণ নেই এই নারীর। সন্তানদের কথাও ঠিকমত স্মরণ করতে পারলেন না তিনি। অনেকদিন হলো এই রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় থাকেন।

এখান থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষে করে বেড়ান। আবার দিন শেষে এই ঠিকানায় এসে ঘুমান। এভাবেই চলছে এই নারীর জীবন। কিন্তু শীতের কামড় এই অসহায় নারীর জীবনটাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

ছাউনির ভেতর দেখা গেলো তিনটি মুদি দোকান। এরমধ্যে রাতে একটি দোকান বন্ধ। দু’টি খোলা থাকলেও একজন দোকনিকে দোকানের ভেতরে ঘুমাতে দেখা গেলো। লংকেশ্বর নামের এক মধ্যবয়সী ব্যক্তির দোকান খোলা পাওয়া গেলো। শীতের রাতে তার দোকানে বেশ কয়েকজন চা, পানসহ অন্য খাবার খাচ্ছেন। লংকেশ্বর এখানে প্রায় এক যুগ ধরে মুদি দোকান চালাচ্ছেন।

মধ্যবয়সী এই মুদি দোকানি জানান, স্টেশনে একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো ঘুমিয়ে আছেন। কেউ রিকশা চালান, কেউ অন্যের বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন, আবার কেউ হোটেলে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

কিন্তু এদের কারো মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। তাই রাতে এখানে এসে ঠাঁই নেন তারা। তবে শীতের কারণে এই মানুষগুলোকে ভীষণ কষ্ট করতে হচ্ছে। এরা উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বাসিন্দা-যোগ করেন মধ্য বয়সী লংকেশ্বর।

এই বিভাগের আরও খবর