বিডিনিউজ ১০, সিলেট: গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি গিয়েছিলেন ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু সেখান থেকে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে চোখে পানি নিয়ে দেশে ফিরেছেন সিলেটের ২২ নারী।
গত ২৬ আগস্ট আমিরাত এয়ারওয়েজের দুটি উড়োজাহাজে করে দুই দফায় দেশে ফেরেন সৌদি আরবে নির্যাতনে শিকার ১১০ নারী গৃহকর্মী। এদের মধ্যে ২২ জন সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। ২২ জনের মধ্যে সিলেট জেলার ৫ জন, হবিগঞ্জ জেলার ৯ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ৭ জন ও মৌলভীবাজার জেলার ১ জন।
তাদের মধ্যে একজন হবিগঞ্জের লাভলী (ছদ্মনাম) বেগম স্বামী ও ছয় বছরের মেয়েকে নিয়ে বাস করেন সিলেটের চন্ডিপুল এলাকায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হলে সিলেটে ফেরাদের এই তথ্য জানান তিনি।
সৌদি আরবের নির্যাতনের স্মৃতি মনে করতে গিয়ে লাভলী বেগমের চোখ বেয়ে অঝর ধারায় পানি পড়ছিল। লাভলী বলেন, ‘ভালো কইরা বাঁচার অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব গেছলাম, কোনো রকম জীবন বাঁচাইয়া আইছি চোখি পানি নিয়ে’।
তিনি বলেন, ‘সৌদির কপিলরা (গৃহকর্তা) অনেক খারাপ। শরীরে হাত দেয়, খারাপ আচরণ করে। আবার কাজ করতে একটু দেরি হইলেই অনেক মারে। আমি দেয়াল মুছতে একটু দেরি করায় তিনদিন আমারে মারছে। এক সপ্তাহ কোনো খাওয়ার না দিয়া একটা রুমে বন্দি কইরা রাখছে। তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পাইরা পালাইয়া আইছি। আর কয়েকদিন ওই কপিলের বাসায় থাকলে আমি মারা যাইতাম।’
তিনি জানান, এক দালাল সৌদি গিয়ে কাজ করে টাকা আয় করার পরামর্শ দেয়। তার পরামর্শ অনুযায়ী ৯ মাস আগে সৌদি আরব যান লাভলী। সেখানে গিয়ে এক গৃহকর্তার বাসায় কাজে যোগ দেন লাভলী। কাজে যোগ দেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বাসার মালিক ও তার স্ত্রী অমানুষিক নির্যাতন করত তাকে। দেশে স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে দিত না।
পরিবারের অভাবের কথা চিন্তা করে নির্যাতন সহ্য করেই সাত মাস কাজ করেন লাভলী। এর মধ্যে পাঁচ মাসের বেতন বাকি রাখেন গৃহকর্তা। নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে গেলে পালিয়ে আসেন তিনি। সৌদির সড়কে এক বৃদ্ধ বাংলাদেশির সহযোগিতায় দূতাবাসে যান। দুই মাস দূতাবাসে থাকার পর গত ২৬ আগস্ট দেশে ফেরেন তিনি।
লাভলী বলেন, দূতাবাসে আমার মতো আরও ১৫০ নারী দেখেছি। সবাই কপিলের নির্যাতনের শিকার। কারও হাত ভাঙা কারও পা ভাঙা। প্রতিদিনই ১০ থেকে ১২ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে দূতাবাসে আসেন।
একই দিন নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলি ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা গ্রামের তানজিনা খাতুন (ছদ্মনাম)। নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি। এরপরই বিয়ে হয়। বিয়ের পর সংসারের অভাবের কারণে দালালের মাধ্যমে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে সৌদি যান তিনি।
তানজিনা খাতুন বলেন, না বুঝে এভাবে দালালের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়া ঠিক না। ওই দেশের মালিকরা কাজ করায় কিন্তু বেতন দেয় না। মারে, বাসায় বন্দি করে রাখে, অসুখ হলে চিকিৎসা করায় না, বাড়িতে কথা বলতে দেয় না। বিদেশ যাওয়া আর জেলে যাওয়া সমান। অনেক কষ্টে পালিয়ে আসছি।