বিডিনিউজ ১০, আন্তর্জাতিক: রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। চীনের বাধার ফলে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার গণহত্যা মামলায় মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) আইসিজের অন্তর্বর্তী পদক্ষেপের আদেশ নিয়ে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়।
বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদ চেয়েছিল রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা বন্ধে সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমার যেন যৌথ বিবৃতি দেয়। কিন্তু মিয়ানমারের মিত্র দেশ চীনের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। এছাড়া চীনের পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য ভিয়েতনামও এর বিরোধিতা করেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো যৌথ বিবৃতি প্রচারের ব্যর্থ হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো আলোচনার পর একটি বিবৃতি দিয়েছে।
বিবৃতিতে নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সদস্য ও ইইউভুক্ত দেশ- ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও এস্তোনিয়ার পাশাপাশি পরিষদের সাবেক সদস্য পোল্যান্ড আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) আদেশ মেনে চলতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। দেশগুলো বলেছে, মিয়ানমারের আদালতের আদেশ মেনে চলার আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে যারা দায়ী তাদের বিচারের আওতায় এনে ‘বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ’ নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে- রাখাইনের কাচিন এবং শান রাজ্যের সংঘাতের মূল কারণ উদঘাটনের পাশাপাশি অবশ্যই মিয়ানমারকে এর সমাধান করতে হবে। মানবাধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এই প্রক্রিয়ারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা রাখাইন রাজ্যে নিধনযজ্ঞ চালানোর ফলে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।
এ দিকে, জাতিসংঘ বলছে- জাতিগত নিধনের জন্য মিয়ানমার সামরিক বাহিনী বর্বর এই অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে দেশটির সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের ধর্ষণ, হত্যা, বাড়ি-ঘরে জ্বালাও-পোড়াওয়ের অভিযোগ উঠলেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। মামলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সংঘাত যেন আরও তীব্রতর না সেজন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানায় দেশটি।
পরবর্তীকালে আইসিজে তাদের পর্যবেক্ষণে জানায়, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গারা গণহত্যার হুমকির মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রাখাইনে সম্ভাব্য গণহত্যার যেই আলামত পেয়েছে, তা পর্যালোচনা করেই আইসিজে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
ওই সময় আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশে আরও বলা হয়, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কোনো প্রস্তাব দেয়নি। তাদের অবশ্যই ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এমন হত্যাকাণ্ড না হয় সেটাও নিশ্চিত করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবে এর বিপরীতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও ডি ফ্যাক্টো এবং নেত্রী অং সান সু চি বলেছেন, দেশটির রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের আরও সময়ের প্রয়োজন। তারা দাবি করেন- মিয়ানমারের বিচার ব্যবস্থাকে তার নিজস্ব গতিতে পরিচালিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দিলেই কেবল রাখাইনের ওই অপরাধের ন্যায়বিচার নিশ্চিত সম্ভব।
এ দিকে, মঙ্গলবার ইইউ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদাপূর্ণভাবে এবং টেকসই উপায়ে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।