নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়ায় আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে অস্বীকার করলে বৃহস্পতিবারের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সকালে মিয়ানমার সীমান্তে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার শুরুতেই ‘আমরা যাব না’ বলে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। কেউ কেউ ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘নাগরিকত্ব ছাড়া আমরা মিয়ানমারে ফেরত যাব না’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
দুপুরে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, আজ সকালে টেকনাফের উনচিপ্রাং ক্যাম্পের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার কথা ছিল, আমরা সেখানে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে রাজি না।
তিনি বলেন, এখন আমরা উখিয়ার জামতলী ক্যাম্পে যাব, সেখানের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের কেউ যদি মিয়ানমারে যেতে চান, তাহলে তাকে ফেরত পাঠানো হবে। পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, তা জানতে চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
তবে ৪টা ১০ মিনিটে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করা হয়নি।
এর আগে বেলা ১১টায় যুগান্তরকে তিনি বলেন, আমরা প্রস্তুত রয়েছি। রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে চাইলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। তবে জোর করে কাউকে পাঠানো হবে না।
গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযানের মুখে সাত লাখেরও বেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বলেন, সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘ মিয়ানমারের এ অভিযানকে জাতিগত নিধনের জ্বলন্ত উদহারণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের কেউ বর্তমান পরিস্থিতিতে রাখাইনে ফিরে যেতে রাজি নয়।
ফলে সব প্রস্তুতি নেওয়ার পরও বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়টি অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে গেল।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের দেড়শ জনের প্রথম দলটিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা ছিল।
রোহিঙ্গাদের ফেরার বিষয়টি যে স্বেচ্ছায় হচ্ছে, তা নিশ্চিত করতে গত মঙ্গল ও বুধবার প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা প্রথম ৫০টি পরিবারের সাক্ষাতকার নেয় ইউএনএইচসিআর।
তাদের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন বুধবার রাতে তা ঢাকায় পাঠায় সিদ্ধান্তের জন্য।
ওই প্রতিবেদনে ইউএনএইচসিআর কী মতামত দিয়েছে জানতে চাইলে আবুল কালাম বলেন, তারা বলেছে, ওই তালিকায় থাকা একজনও বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি নয়।
ইউএনএইচসিআর বলে আসছে, জোর করে কাউকে ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না। এতে তাদের জীবন আরও ঝুঁকিতে পড়বে।