নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখন যে পর্যায়ে আছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, আমাদের সেইটুকু থাকা দরকার, যদি কোনো আপৎকালীন সময় হয়, যেমন এই ঝড় ঝঞ্ঝা– এরকম ক্ষেত্রে, আমাদের খাদ কিনতে যদি ঘাটতি দেখা দেয়, সেই খাদ্য কেনার মত, অর্থাৎ তিন মাসের খাদ্য কেনার মত ডলারটা যেন আমাদের হাতে থাকে। ওইটা নিয়েই রিজার্ভের জন্য চিন্তা। এছাড়া রিজার্ভের এত চিন্তা না।
জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে রিজার্ভ ও ডলার সঙ্কট নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ডলার সঙ্কট এখন পুরো বিশ্বব্যাপী, এটা শুধু বাংলাদেশে না।
প্রথম গেল করোনা অতিমারী, আর তারপর ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ, আর সেই যুদ্ধের সাথে স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশন। যার ফলে আজকে সারা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি যেভাবে বেড়ে গেছে…। দ্বিতীয় হচ্ছে পরিবহন, পরিচালন ব্যয় বেড়ে গেছে, যার কারণে ডলার সঙ্কটটা এখন সমগ্র বিশ্বেই রয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনা অতিমারীর মধ্যে যেটা হয়েছিল যে আমদানি রপ্তানি বন্ধ, বিদেশে যাতায়াত বন্ধ, সবকিছু বন্ধ থাকাতে খরচও আমাদের কম ছিল, ভ্যাকসিন কিনতেই যা ডলার লেগেছিল, বাকি আমরা খুল ভালোভাবে একটা রিজার্ভ রাখতে পেরেছিলাম।
কিন্তু এরপর যখন আবার অর্থনীতি উন্মুক্ত হল, স্বাভাবিকভাবেই সেই সুযোগটা থাকেনি, ডলার খরচ হচ্ছে এবং হবে। তার থেকেও বড় কথা, মানুষকে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিচ্ছি, গ্যাস দিয়ে এখানে ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে, বিনিয়োগ হচ্ছে, উৎপাদন বাড়ছে।
কাজেই ডলারের ওপর চাপ পড়বে, তবে সেই চাপটা… আমরা একটা কথা বলি, আমরা তো আগেও সরকারে এসেছি, যখন ৯৬ সালে এসেছিলাম, তখন কতটুকু ছিল আমাদের রিজার্ভ? জাতির পিতা যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়তে শুরু করেন, তখন তো এক পয়সাও রিজার্ভ ছিল না। আমরা কি চলি নাই, আমরা কি এগোতে পারিনি?
ডলার আর রিজার্ভ নিয়ে বেশি বেশি কথা বলতে বলতেই সবার মাথায় ‘ওই রিজার্ভই ঢুকে গেছে’ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভ এখনও যা আছে, তাতে অন্তত এটুকু বলতে পারি, আমাদের এখনও কোনো সঙ্কট এভাবে নাই। তবে হ্যাঁ, আমরা সব সময় চেষ্টা করি, যে রিজার্ভটা যেন আমাদের ধরে থাকে, সেদিকে।
২০০৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে, সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, যখন বিএনপি ক্ষমতায়, তখন রিজার্ভ কত ছিল? ০.৭৪৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার, মানে এক বিলিয়ন ডলারের চেয়ে কম। আর এখন আমাদের আছে ৩১.২২ বিলিয়ন ডলার। কাজেই এটা নিয়ে দুশ্চিন্তর খুব বেশি একটা কারণ নেই।
যে কারণে আমরা বলছি যে আমাদের দেশের যত অনাবাদি জমি, তাতে ফসল ফলাব, নিজের খাবার খাব, অন্যের ওপর আর নির্ভরশীল হব না। কারো কাছে হাত পেতে চলব না। কারো কাছে ভিক্ষা আনব না। নিজের উৎপাদন করে আমরা নিজেরাই চলব। আমাদের খাবারের অভাব হবে না।
যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলার সরকারের প্রস্তুতি থাকে জানিয়ে রসিকতা করে শেখ হাসিনা বলেন, এমনই প্রস্তুতি নিলাম যে ঘূর্ণিঝড় চলেই গেল, আঘাত হানতেই সাহস পেল না। তবে আবার আসবে। একটা নিয়ম আছে, একটার পর পরই আরেকটা আসে, সেজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।