নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পৃথক সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী গ্রামে এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একই উপজেলার নিলক্ষ্যা ইউনিয়নে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিলক্ষ্যার সংঘর্ষের ঘটনায় ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬ রাউন্ড গুলিসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- বাঁশগাড়ী বালুয়াকান্দি এলাকার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ছেলে তোফায়েল হোসেন (১৮), নিলক্ষা ইউনিয়নের বীরগাও এলাকার উসমান মিয়ার ছেলে সোহরাব হোসেন (৩০) ও গোপীনাথপুর এলাকার মৃত সোবহান মিয়ার ছেলে মো. স্বপন মিয়া (২৫)।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল হক ও সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শাহেদ সরকারের সমর্থকদের বিরোধ চলে আসছিল।
এ বিরোধের জের ধরে গত মার্চে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান শাহেদ সরকার। এর ৪০ দিন পর গত ৩ মে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক। ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক হত্যার পর থেকে প্রতিপক্ষের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় শাহেদ সরকার সমর্থকরা। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর শুক্রবার সকালে শাহেদ সমর্থকরা এলাকায় ফিরলে প্রতিপক্ষ সিরাজুল হকের সমর্থকরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুইপক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়।
এর মধ্যে ৪ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তোফায়েল হোসেন নামে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। তোফায়েল সম্প্রতি বাঁশগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচনী পরীক্ষা শেষে ফরম পূরণ করেছে। সে শাহেদ সরকারের সমর্থক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এ ছাড়া গুরুতর আহতাবস্থায় সুমন মিয়া (২৬), মামুন মিয়া (২৫) ও সুমন মিয়া (২৬) নামের ৩ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে একই উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নেও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তাদের সমর্থকরা আবার বাঁশগাড়ি এলাকায় বিভিন্ন পক্ষকে সমর্থন দিয়ে সংঘর্ষে অংশ নিয়ে থাকে।
এর মধ্যে নিলক্ষা এলাকার তাজুল ইসলামের সমর্থকরা বাঁশগাড়ী এলাকার সিরাজুল হক সমর্থক এবং আবদুল হকের লোকজন শাহেদ সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সমর্থকরা বাঁশগাড়ীর সংঘর্ষের ঘটনায় অংশ নেওয়ার পর নিজ এলাকায় ফিরে প্রতিপক্ষ আবদুল হকের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়।
এতে প্রতিপক্ষের লোকজন প্রতিহত করতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষটি দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রথমে তাজুল ইসলামের সমর্থক সোহরাব হোসেন ও পরে আবদুল হক সরকারের সমর্থক স্বপন মিয়া নামের দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হয় কমপক্ষে ৫০ জন। এর মধ্যে ১৫/১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।
নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংগঠিত পৃথক সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষ শেষে নৌকা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ নিলক্ষ্যা এলাকা থেকে ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬ রাউন্ড গুলিসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।