বিডিনিউজ ১০, আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: ঈদ উদযাপন কেমন করছেন ভারতনিয়ন্ত্রিত জুম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের বাসিন্দারা? এক কাশ্মীরির ক্ষোভযুক্ত বার্তায় এ প্রশ্নের জবাব মেলে, কারফিউ চললে ঈদ তো দূরের কথা স্বাভাবিক জীবনই চালিয়ে নেয়া দুষ্কর হয়ে যায়।
ঈদকে সামনে রেখে শুক্রবার কাশ্মীরে চলমান ১৪৪ ধারা উঠিয়ে নিয়েছিল ভারত সরকার। টানা ৫ দিনের অচলাবস্থার কিছুটা হলেও অবসান হয়। চালু করা হয় ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিসেবা।
জুমার নামাজ আদায় করতে দিতে কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল। যদিও রাজধানী শ্রীনগরের সবচেয়ে বড় মসজিদ (জামা মসজিদ) বন্ধ রাখা হয়েছিল।
কিন্তু রোববার কাশ্মীরে ফের কারফিউ জারি করে ভারত প্রশাসন। যে কারণে সোমবার ঈদের দিনে পুরো কাশ্মীরের পথঘাট থমথমে বিরাজ করছে।
কাশ্মীরের ও শ্রীনগরের বেশিরভাগ মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয়নি দেশটির সরকার। খবর এনডিটিভির
এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, রাজধানী শ্রীনগরে কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন সেখানকার মুসলিমরা। তাই অনেকেই ঈদের নামাজও পড়তে পারেননি।
রয়টার্স জানাচ্ছে, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর বিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে ঈদ উদযাপন করছেন কাশ্মীরের মুসলমানরা।
কারফিউ জারির মধ্যেও ঈদের আগের দিনে শ্রীনগরের পশুর হাটে বেশ কিছু ভেড়ার দেখা মিলেছিল। কিন্তু কারফিউ ভেঙে কোরবানির পশু কিনতে আসেনি কেউ।
ঈদের আগের দিন হাবাকের বাসিন্দা আব্দুল গাফ্ফার বলছিলেন, পকেটে একটা টাকাও নেই। ঈদে ছেলেমেয়েদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে হয়, কোরবানির পশু কিনতে হয়। কিন্তু আমাদের এখন চিন্তা অন্য কিছু। সেটা হলো, খাব কী?
সবার হাতে যে টাকা নেই এমনটা নয়। যারা ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রেখেছেন তারাও না খেয়েই মরছেন।
একজন ব্যাংক কর্মী জানালেন, মানুষ খেপে রয়েছে, অথচ ব্যাংকের ভল্টে কোনো টাকা নেই। এটিএম বুথ গুলোও সব অকেজো, নেটওয়ার্ক নেই, সেখানে পাঠানোর টাকাও আসেনি।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটিতে ঈদ শুধু নামে মাত্র উদযাপিত হচ্ছে সেখানে।
বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক অনেক গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে, ঈদের আগের দিনও (রোববার) বিক্ষোভে ফুঁসেছে কাশ্মীর।
রয়টার্স জানায়, রোববার বিকালে শ্রীনগরের সোউরা এলাকার মসজিদে কয়েকশ বিক্ষোভকারী জড়ো হন। মাথায় স্কার্ফ পরে অসংখ্য নারী ও কিশোরী রাজপথে নেমে আসে।
তারা ভারতবিরোধী স্লোগান দেয়ার পাশাপাশি কাশ্মীর থেকে সেনা প্রত্যাহার ও তাদের স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। এসময় বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘অনুচ্ছেদ ৩৫-এ রক্ষা কর’ লেখা ব্যানার দেখা যায়।
অনেককেই স্লোগান দিতে দেখা গেছে, ‘মোদী, কাশ্মীর আপনার বাবার সম্পত্তি নয়’। বিক্ষোভকারীরা আরও স্লোগান দিচ্ছিলেন, আমরা কি চাই? আজাদী। কখন চাই? এখনি।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গত শনিবার নিরাপত্তা শিথিল করার পরে শ্রীনগরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। রোববারও পরিবেশ শান্ত ছিল। সোমবার ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে মুসলিমদের ঈদের নামাজ আদায়ের ছবি প্রকাশ করেছে সরকার পক্ষ।
জম্মু-কাশ্মীরের কর্মকর্তারা বলছেন, গত সপ্তাহ থেকে গ্রেফতার কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিসহ জ্যেষ্ঠ বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদদের স্থানীয় মসজিদগুলোতে নমাজ পাঠের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরের কর্মকর্তারা আরও বলছেন, ঈদ উপলক্ষ্যে রাজধানী শ্রীনগরে কয়েকটি অস্থায়ী বাজার তৈরি করা হয়েছে। সেখানে সবজি, এলপিজি সিলিন্ডার (তরল গ্যাস), হাস-মুরগি এবং ডিম ঘরে ঘরে ভ্যানের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিশেষ টেলিফোন বুথও বসানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। শুধু বিশেষ মর্যাদা বাতিল নয় কাশ্মীরকে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়।
সকারের এমন সিদ্ধান্তে গোটা কাশ্মীরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষোভ বানচাল করতে প্রথম দিন থেকেই সেখানে নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
হাজার হাজার সেনা মোতায়ন করা হয়েছে। সেখানকার মানুষ এখন সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। ঈদের আমাজের ছিটেফোটারো দেখা মিলছে না সেখানে। তবুও ভারতীয় সংবিধোনের ৩৭০ অনুচ্ছেদ ফের ফিরিয়ে আনতে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে জুম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকরা।