,

মিয়ানমারের চিঠিতে আশা দেখছে বাংলাদেশ

বিডিনিউজ ১০ ডটকম: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে গঠনমূলক বার্তা নিয়ে চিঠি বিনিময় হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসন নিয়ে দেশটির মনোভাব জানতে চাওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী কাইয়া টিন জানিয়েছেন, ‘মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠককে আমি বলবো, আশাব্যঞ্জক।  চীন ও মিয়ানমার সরকারের সদিচ্ছা দেখেছি আমরা। মিয়ানমারও তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। চীন সরকারও চায় রোহিঙ্গারা নিজ আবাসস্থলে ফিরে যাক। আমরা এখন যথাসময়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আশা করছি।’

রোহিঙ্গাদের আস্থা ফেরানোর জন্য গ্রামভিত্তিক প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো নির্দিষ্ট গ্রামে রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রকল্প হিসাবে প্রত্যাবাসন করার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়। প্রত্যাবাসনের সময় জাতিসংঘ ও তার সংস্থাগুলো, চীন, ভারত ও জাপানসহ যেকোনো ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি হবে।

ত্রিপক্ষীয় সচিব পর্যায়ের বৈঠকের আগেই গত ১ জানুয়ারি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারকে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ।  গত সপ্তাহে দেশটির পক্ষে সেই চিঠির জবাব দিয়েছেন মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী কাইয়া টিন। চিঠির জবাবে মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বলে জানা গেছে।

মিয়ানমার জানিয়েছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে অঙ্গীকারবদ্ধ তারা।  এছাড়া বাংলাদেশসহ সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ক সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন মিয়ানমারের মন্ত্রী।
এ বিষয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘এটিও অবশ্যই তাদের ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন বলে মনে করি।’

এদিকে, কূটনীতিকরা বলছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের লক্ষ্যে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ দেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক চাপ হয়তো আছে, সেটা আরও বাড়াতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বিষয়ে আরও বেশি সক্রিয় করাতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ব্যাপারে তাদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করাতে হবে।  এটা স্পষ্ট যে, রোহিঙ্গা সংকট একটা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছে।  সুতরাং বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।’

ড. দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর ভারত, চীন ও জাপান চাপ সৃষ্টির কথা বলায় আন্তর্জাতিক আদালত থেকে যে চাপ আছে, তা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে বারবার আলোচনায় এসেছে।  সেদিক থেকে মিয়ানমার একটা চাপের মধ্যে আছে। এই পটভূমিতে গত ১৯ জানুয়ারি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে।  এ ইস্যুকে এক ধরনের কূটনৈতিক অগ্রগতি বলতে পারি। এই আলোচনা থেকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমরা আশার আলো দেখছি। যদিও অতীতে এ রকম প্রয়াস থেকে কোনো সফলতা আসেনি, তারপরও আমরা আশাবাদী হতে চাই।’

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে ২০১৭ সালের আগস্টে শুরু হওয়া সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা অভিযানে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়। ওই সময়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালের অভিযানের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে; তাদের নাম, পরিচয় ও রাখাইন রাজ্যের কোন এলাকা থেকে এসেছে, তার বিস্তারিত বিবরণসহ বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করা হয়েছে।

নিবন্ধনের তথ্য মতে, মিয়ানমারের অভিযানের পর আট লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মিয়ানমার তালিকা থেকে ৪২ হাজার রোহিঙ্গার নাম যাচাই করেছে। তার মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ নাম মিয়ানমার প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ক্লিয়ার করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর